বিহারে চলছে দ্বিতীয় ও শেষ দফার বিধানসভা নির্বাচন
দ্বিতীয় ও শেষ দফায় নির্বাচন চলছে ভারতের বিহারে। রাজ্যের ২৪৩ টি আসনের মধ্যে প্রথম দফায় গত ৬ নভেম্বর ১২১ আসনে ভোট নেয়া হয়। দ্বিতীয় ও শেষ দফায় মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) ১২২ বিধানসভা আসনে ভোটগ্রহণ চলছে।
ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে সকাল ৭ টায়, চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। সকাল ৯টা পর্যন্ত প্রথম ২ ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় দফায় মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখ। এর মধ্যে বেশিরভাগ ভোটার (২.২৮ কোটি) ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী। মাত্র ৭ লাখ ৬৯ হাজার ভোটারের বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে।
এই দফায় নজর থাকবে রাজ্যের পূর্ব চম্পাহরণ, পশ্চিম চম্পাহরণ, সীতামারি, মধুবনী, সুপৌল, আরারিয়া, কিশানগঞ্জ- এর মত নেপাল সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। মুসলিম অধ্যুষিত এসব এলাকায় জোর টক্কর হবে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন জোট ‘এনডিএ’ এবং বিরোধী জোট ‘মহাগাটবন্ধন’ এর মধ্যে। নির্বাচনী প্রচারণায় অনুপ্রবেশকারীদের বিরোধী জোটের ভোটব্যাংক হিসেবে কটাক্ষ করেছিল এনডিএ নেতারা।
এ দফায় মোট ১ হাজার ৩০২ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। এর মধ্যে রয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জেডিইউ প্রার্থী মন্ত্রী সুমিত কুমার সিং (চাকাই), জেডিইউ প্রার্থী মন্ত্রী লেশি সিং (ধামদাহ), বিজেপি প্রার্থী মন্ত্রী নীরজ কুমার সিং (ছাতাপুর), জেডিইউ প্রার্থী মন্ত্রী বিজেন্দ্র প্রসাদ যাদব (সুপৌল), মন্ত্রী জয়ন্ত রাজ (আমারপুর), মন্ত্রী নিতিশ মিশ্র (ঝঞ্ঝারপুর), মন্ত্রী রেনু দেবী বেতিয়া), বিজেপি প্রার্থী ক্রীড়াবিদ শ্রেয়শী সিং (জামুই), বিজেপি প্রার্থী প্রেম কুমার (গয়া টাউন), সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী তারকিশোর প্রসাদ (কাটিহার) প্রমুখ।
অন্যদিকে বিরোধী জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন আরজেডি প্রার্থী উদয়নারায়ণ চৌধুরী (সিকান্দ্র), কংগ্রেস প্রার্থী শাকিল আহমেদ খান (কাদোয়া), সিপিআইএমএল প্রার্থী মেহবুব আলম (কুটুম্বা)।
শেষ দফায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বিজেপি, জেডিইউ নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবং কংগ্রেস, আরজেডি নেতৃত্বাধীন মহাগাটবন্ধনের মধ্যে। এছাড়াও প্রশান্ত কিশোরের জন সুরজ পার্টি, আসাদুদ্দিন ওয়াইসি’র অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এআইএমআইএম) মতো আঞ্চলিক দলগুলোও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
শেষ দফার নির্বাচন হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (হ্যাম), বিকাশশীল ইনসান পার্টি (ভিআইপি), রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা (আরএলএম) এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীনের (এআইএমআইএম) মতো ছোট আঞ্চলিক দলগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নির্দিষ্ট কিছু নির্বাচনী এলাকায় এই দলগুলোর প্রভাব সামগ্রিক ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
জিতেন রাম মাঝির হ্যাম ৪টি আসনে লড়ছে, এনডিএ জোটের শরিক দল বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী মুকেশ সাহনি’র দল ভিআইপি লড়ছে অন্তত ১৫ টি আসনে। ইতোমধ্যেই বিরোধী জোটের তরফে তাকে আগাম প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়েছে, বিরোধী জোট ক্ষমতায় আসলে তাকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হবে। উপেন্দ্র কুশওয়ার দল আরএলএম ৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
অন্যদিকে পূর্ণিয়া, কিশানগঞ্জ, আরারিয়া মত আসনগুলোতে মুসলিম ভোট একত্রিত করে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আসাদুদ্দিন ওয়াইসি’র দল এআইএমআইএম। ২০২০ সালের নির্বাচনে পাঁচটি আসনে জয়লাভ করে তারা। এই নির্বাচনেও গতবারের পাঁচটি আসনে জয়ের ধরা বজায় রাখতে এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মানুষের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের উপর জোর দিয়ে ঐতিহ্যবাহী দলগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় এআইএমআইএম।
দ্বিতীয় দফায় ভোট শুরুর সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী- প্রত্যেকেই গণতন্ত্রের উৎসব ভোট প্রক্রিয়ায় সামিল হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানান।
এর আগে বিহার নির্বাচনের প্রথম দফায় রেকর্ডসংখ্যক ভোট পড়ে, ভোটের হার ছিল ৬৪.৬৬ শতাংশ। ভোট গণনা হবে আগামী ১৪ নভেম্বর।
বিহার বিধানসভার পাশাপাশি গোটা দেশজুড়ে ৭টি রাজ্যের ৮টি বিধানসভার আসনে উপনির্বাচন চলছে। এর মধ্যে রয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের বুদগাম ও নাগরোটা কেন্দ্র, রাজস্থানের অন্ত, ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলা, তেলেঙ্গানার জুবিলী হিলস, পাঞ্জাবের তর্ন তরণ, মিজোরামের ডাম্পা এবং ওড়িশার নওপাদা কেন্দ্র।

Comments are closed.