‘মধ্যপ্রাচ্যে হামলা করে নির্বাচনে জনপ্রিয়তা বাড়াতে চান বাইডেন’
ইরাক ও সিরিয়ায় সাম্প্রতিক বিমান হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া ও চীন। সোমবার গভীর রাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এই দুই দেশ ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক উত্তেজনার ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য অভিযুক্ত করেছে। মস্কো বলেছে, মার্কিন বিমান হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নভেম্বরে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত। এ হামলার মাধ্যমে নির্বাচনে জনপ্রিয়তা বাড়াতে চান বাইডেন। রাশিয়া বৈঠকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘাত বাড়ানোই যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার লক্ষ্য।
চীনও একই অভিযোগ এনেছে। দেশটির রাষ্ট্রদূত জুন ঝাং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বলে যে, তারা মধ্যপ্রাচ্য বা অন্য কোথাও সংঘাত সৃষ্টি করতে চায় না, কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার বিপরীত কাজ করে। তাদের এমন হামলা মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতার দুষ্টচক্রকে বাড়িয়ে তুলবে। খবর-আল জাজিরা
দেশ দুটির বক্তব্য- যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা উসকে দিচ্ছে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’। ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানসমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য করে দেশটির হামলা ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জানুয়ারি শেষ দিকে জর্ডানে তিন মার্কিন সেনা হত্যার প্রতিবাদে মধ্যপ্রাচ্যে হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। টানা কয়েকদিন মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে বিমান হামলা চালানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে আরও প্রতিশোধমূলক হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত শুক্রবার ইরাক ও সিরিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিন বাহিনী বেশ কিছু সামরিক হামলা চালায়। আমেরিকার কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ এড়াতে হামলাগুলো সাবধানতার সঙ্গে পরিচালনা করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান সিএনএনের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাইডেন যখন হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তখন স্পষ্ট ছিল, সেটি ছিল আমাদের প্রতিক্রিয়ার শুরু। এ বিষয়ে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র টানা তৃতীয় দিনের জন্য ইরান সমর্থিত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। সর্বশেষ রোববারও হামলা হয় ইয়েমেনে হুতিদের ওপর।
মার্কিন সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা হুতিদের একটি জাহাজ-বিরোধী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। অস্ত্রটি ওই অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনীর রণতরী এবং বাণিজ্যিক জাহাজের জন্য একটি আসন্ন হুমকি ছিল।
এটি ছিল ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে কয়েক দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় সামরিক পদক্ষেপ। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র শনিবার উত্তর ইয়েমেনে ৩৬টি হুতি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে। এ ছাড়া শুক্রবার সিরিয়া ও ইরাকে ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। গাজায় জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে এবং উপত্যকায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আরও মানবিক সহায়তার জন্য আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি।
চার দিনের সফরে ব্লিঙ্কেন সৌদি আরব, মিসর, কাতার, ইসরায়েল এবং পশ্চিম তীর সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলে ব্লিঙ্কেনের এটি পঞ্চম সফর।