×
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত : তারিখ - ২০২৫-১২-১৮, সময় - ০৭:৪৮:৩৫ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় একটি দুর্গম পাহাড়ে প্রায় ২১ কোটি বছর আগের হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের ছাপ আবিষ্কৃত হয়েছে। দেশটির একটি জাতীয় উদ্যানে বিরল এই আবিষ্কার হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। পাহাড়ের খাড়া দেয়ালে সারিবদ্ধ এসব পদচিহ্ন শুধু প্রাচীন প্রাণীর অস্তিত্বই নয়, তাদের দলগত চলাফেরা ও আচরণ সম্পর্কেও নতুন ধারণা দিচ্ছে গবেষকদের।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, পায়ের ছাপগুলোর কিছু কিছুর ব্যাস প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড়। এগুলো সমান্তরাল সারিতে ছড়িয়ে রয়েছে এবং অনেক ছাপেই স্পষ্টভাবে পায়ের আঙুল ও নখের চিহ্ন দেখা যায়। গবেষকদের ধারণা, এসব ডাইনোসর ছিল প্রোসরোপড প্রজাতির। এরা ছিল তৃণভোজী, লম্বা গলা, ছোট মাথা এবং ধারালো নখযুক্ত ডাইনোসর।
মিলানভিত্তিক জীবাশ্মবিদ ক্রিস্তিয়ানো দাল সাসো বলেন, ‘যে অঞ্চলে আমি থাকি, সেখানে এমন এক বিস্ময়কর কিছু আবিষ্কার করতে পারবো— এটা আমি কখনও কল্পনাও করিনি।’
বিবিসি বলছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে এক আলোকচিত্রী প্রথম এই পায়ের ছাপগুলো খুঁজে পান। উত্তর-পূর্ব মিলানের কাছে স্টেলভিও জাতীয় উদ্যানে একটি খাড়া পাহাড়ের গায়ে শত শত মিটারজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এসব ছাপ তার নজরে আসে। প্রায় ২৫ কোটি থেকে ২০ কোটি ১০ লাখ বছর আগে ট্রায়াসিক যুগে এই পাহাড়ি দেয়ালটি ছিল জোয়ার-ভাটার সমতল ভূমি। পরবর্তীতে সেটিই আলপাইন পর্বতমালার অংশ হয়ে ওঠে।
দাল সাসো বলেন, ‘এই জায়গাটি একসময় ডাইনোসরে ভরা ছিল। এটি এক বিশাল বৈজ্ঞানিক ভাণ্ডার’। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ডাইনোসরের দলগুলো সুসমন্বিতভাবে চলাফেরা করত। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আরও জটিল আচরণের চিহ্নও আছে— যেমন, কিছু জায়গায় প্রাণীদের বৃত্তাকারে জড়ো হওয়ার নিদর্শন পাওয়া গেছে, সম্ভবত আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে।’
প্রোসরোপড ডাইনোসরগুলোর দৈর্ঘ্য ১০ মিটার পর্যন্ত হতে পারত। সাধারণত তারা দুই পায়ে হাঁটত। তবে কিছু ক্ষেত্রে পায়ের ছাপের সামনে হাতের ছাপও পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত দেয়— তারা হয়তো থেমে সামনের পা মাটিতে রেখে বিশ্রাম নিয়েছিল।
এই স্থানটি আবিষ্কার করা আলোকচিত্রী এলিও দেল্লা ফেরেরা বলেন, তিনি আশা করেন এই আবিষ্কার ‘আমাদের সবার মধ্যে নতুন করে ভাবনার জন্ম দেবে যে আমরা যে জায়গাগুলোতে বাস করি, আমাদের ঘর, আমাদের গ্রহ সম্পর্কে আমরা আসলে কত কম জানি, তা বুঝতে সাহায্য করবে।’
ইতালির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম এবং সেখানে যাওয়ার কোনও পথ নেই। তাই গবেষণার কাজে ড্রোন ও দূর-অনুসন্ধান প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। স্টেলভিও জাতীয় উদ্যানটি ইতালির সুইজারল্যান্ড সীমান্তসংলগ্ন ফ্রায়েলে উপত্যকায় অবস্থিত। এখানেই আগামী বছর শীতকালীন অলিম্পিকের কিছু অংশ আয়োজন হওয়ার কথা রয়েছে।
