×

  • নিউজ ডেস্ক

    প্রকাশিত : তারিখ - ২০২২-০৯-০৩, সময় - ০৯:৫৮:০১

ঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে ফুলঝাড়ুর (উলুফুল) জুড়ি নেই। গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহর এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে এই ঝাড়ুর কদর। আর এ ফুলঝাড়ু বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার যমুনা তীরবর্তী এলাকার মানুষজন।

যমুনার প্রবল ভাঙনের কারণে দুর্গাপুর ও গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের নদী পাড়ের বাসিন্দারা প্রতিবছরই বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। এসব এলাকার মানুষেরা বছরের অর্ধেকটা সময় কর্মহীন থাকেন। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ফুল ঝাড়ু তৈরির কারখানা চালু করায় এ অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছোট আকারে প্রায় ৫০টি ফুলঝাড়ু তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ নারী-পুরুষ কাজ করছেন।

ফুল ঝাড়ু তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় ১০-১২ বছর আগে পটল বাজার এলাকার নজরুল ইসলাম নুরু, আব্দুল হাই, সোলেমান ও মাজেদ চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি এলাকা থেকে স্বল্প পরিসরে উলুফুল (ফুল ঝাড়ুর ফুল) এনে স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে বাঁধাই করে ঢাকায় হকারদের মাধ্যমে বিক্রি করতে শুরু করেন। ব্যবসাটি লাভজনক হওয়ায় তারা ব্যবসার প্রসার ঘটান। এছাড়া শ্রমিকারও উৎপাদনের ভিত্তিতে এসব কারখানায় কাজ করে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা উপার্জন করছেন।ফুলঝাড়ু কারখানাগুলো মূলত কালিহাতী উপজেলার মগড়া বাজার, পটল বাজার, দূর্গাপুর, কদিমহামজানী, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড়, শ্যামশৈল, কুর্ষাবেনু ও পাথরঘাট এলাকায় গড়ে উঠেছে।

শ্রমিক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আগে কৃষি কাজ করতাম। তখন খুব কষ্ট হতে। বর্তমানে ঝাড়ু তৈরি করি। প্রতি ঝাড়ু থেকে ৩ থেকে ৮ টাকা করে পেয়ে থাকি। এতে আগের চেয়ে আমার সংসার অনেক ভাল চলে।’

অপর শ্রমিক রফিক মিয়া বলেন, ‘ফুল, গুনা, পাঠ কাঠি ও কসটেপ সব মালিকের। আমরা শুধু ঝাড়ু তৈরি করি। প্রতিদিন অনায়েসে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করতে পারি। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে আমারা ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারছি।’

পটল বাজারের ফুলঝাড়ু ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম নুরু বলেন, ‘একসময় এ ব্যবসার সুদিন থাকলেও এখন ব্যবসায় কোন শান্তি নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও রাঙ্গামাটি এলাকা থেকে উলুফুল খুবই কম দামে কিনে আনতাম। কিন্তু মহাসড়কে পুলিশ ও বনবিভাগের নানা তালবাহানার ফলে ওই ফুলের দাম ২০ গুণেরও বেশি পড়ে যায়। অপরদিকে তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচও বেড়েছে। এ শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে নদী তীরবর্তী প্রায় এক হাজার নারী ও পুরুষ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বে। আর তাই বাধ্য হয়ে নিজের বাড়ির ৩০ শতাংশ ভূমিতে উলুফুল চাষ শুরু করেছি। যাতে এসব এলাকার উৎপাদিত উলুফুল দিয়েই কারখানাগুলো সচল রাখা যায়।’

দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘চরাঞ্চলে ফুলঝাড়ু কারখানা নির্মিত হওয়ায় যমুনার ভাঙন কবলিত কর্মহীন মানুষের মধ্যে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। এসব ক্ষুদ্র শিল্প টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।’

জানা গেছে, পুরুষ শ্রমিকরা উলুফুল ও পাটখড়ির সঙ্গে গুনা দিয়ে বেঁধে মোঠা আটি তৈরি করেন। পরে বাঁধাই করা মোঠা আটিগুলো কস্টেপ অথবা পিভিসি পাইপ লাগিয়ে নারী শ্রমিকরা বাজারজাত করার উপযোগী করে তোলেন।


নিউজটি শেয়ার করুন



এ জাতীয় আরো খবর..
ইউটিউবে আমরা...
ফেসবুকে আমরা...