কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার ১নং হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বাসিন্দা বিধবা রাজিয়া বেগম। তার দুটি কিডনিই বিকল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সপ্তাহে তিনটি ডায়ালাইসিস করাই তার বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। কিন্তু কক্সবাজার জেলায় সরকারিভাবে ডায়ালাইসিস করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছে পরিবারটি।
শহরের বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিবার ডায়ালাইসিসে খরচ হচ্ছে ৬ হাজার টাকা, যা এই দরিদ্র পরিবারের পক্ষে বহন করা অসম্ভব। অর্থাভাবে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে না পারায় রাজিয়ার অবস্থা যখন সংকটাপন্ন, তখন তার ভাই কলেজছাত্র ওমর ফারুক নিরুপায় হয়ে গত ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে ছুটে আসেন। তিনি সাক্ষাৎ করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সাথে। এ সময় জেলা প্রশাসক ফারুকের কাছ থেকে বোন রাজিয়ার অসুস্থতার কথা শোনেন। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে রাজিয়াকে সহায়তার জন্য লিখিত সুপারিশ করেন।
জেলা প্রশাসকের সেই সুপারিশ নিয়ে ফারুক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিটে যোগাযোগ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত রাজিয়ার ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়া শুরু করে।
ফারুক জানান, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা এবং সরকারি বিধি মোতাবেক ২০ হাজার টাকা এক কালীন জমা দেওয়ার পর ডায়ালাইসিসের তারিখ দেওয়া হবে। সেখানে প্রতি ডায়ালাইসিসে খরচ হবে মাত্র ৫০০ টাকা।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) ফারুক আবারও জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করে আর্থিক সহায়তার অনুরোধ করলে ডিসি তাকে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান করেন। অন্য জেলার বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও বোনের চিকিৎসার জন্য তিনবার ডিসির সাক্ষাৎ ও সহযোগিতা পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ফারুক। তিনি বলেন, স্যার অত্যন্ত ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় আমার কষ্টের কথা শুনেছেন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রুমা ভট্টাচার্য বলেন, ডিসি মহোদয়ের রেফারেন্স দেওয়া রোগীর আবেদনটি অনুমোদিত হয়েছে। আবেদনের ফর্মে দেওয়া ফোন নম্বরে ওয়ার্ড থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকে জমা দিয়ে আগামী ৬ মাসের জন্য ডায়ালাইসিস ইউনিটে ভর্তি হতে পারবেন। নিয়ম অনুযায়ী ৬ মাস পর এটি পুনরায় নবায়ন করতে হবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন জেলা প্রশাসকের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, একজন ডিসি হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে এটি তার অনন্য মানবিক গুণাবলি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, প্রশাসনিক কাজের ফাঁকে এমন মানবিক কাজের সুযোগ পেলে আমি অসহায় নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।
এ জাতীয় আরো খবর..