×

  • নিউজ ডেস্ক

    প্রকাশিত : তারিখ - ২০২৫-০৭-২৭, সময় - ০৫:১৪:৫৫

মাসুদ পারভেজ, সিনেমার সুবাদে যার পরিচিত হয়ে উঠেছে সোহেল রানা হিসেবে। অভিনেতা পরিচয়ের বাইরে তার আরেকটি বড় পরিচয়, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু গর্ব করার মতো সেই পরিচয় কিংবা সার্টিফিকেট নিয়ে তিনি এখন অনুতপ্ত, বিরক্ত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে অনেকটা নিজের ক্ষোভ উগরে দিলেন এই নেতা-অভিনেতা, প্রযোজক-পরিচালক।

২৭ জুলাই সোহেল রানা নিজের ফেসবুক ওয়ালে বেশ কয়েকটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম ছবি ‘ওরা ১১ জন’, প্রযোজক মাসুদ পারভেজ। ধিক তোমাকে, ধিক তোমার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট এবং মুক্তিযোদ্ধা আইডেন্টিটি কার্ডকে।’

এদিন দেওয়া আরেকটি পোস্টে এই অভিনেতা লিখেছেন, ‘দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কষ্ট করে টাকা জমা দেওয়ার জন্য। বসার জায়গা নেই। ২৫ জনের বসার জায়গা হলে, ১০০ জন রোগী দাঁড়িয়ে আছে। সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে বা স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন যোদ্ধা হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনরকম দাম সম্মান কিছুই নেই। কেবিন ভাড়া যা ছিল, এক বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফিকেট বা মুক্তিযোদ্ধা আইডেন্টিটি কার্ড কোন কাজে আসে, বুঝি না। কোনও অভিযোগ নেই, শুধু একটু দীর্ঘ নিঃশ্বাস!’

তার পোস্ট দেখে বোঝাই যাচ্ছে, চিকিৎসা নিতে গিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনও ধরনের সুযোগ-সুবিধা তিনি পাননি। হয়তো আরও অনেক ক্ষেত্রেই পান না। সেটা নিয়েই এই অভিনেতার ক্ষোভ ও অসহায়তা প্রকাশ পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনও সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার জন্য ক্ষোভ জানিয়েছিলেন তিনি।

বলা দরকার, শিক্ষা জীবনে একজন তুখোড় ছাত্রনেতা ছিলেন মাসুদ পারভেজ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। তার জন্ম ঢাকাতে হলেও পৈতৃক নিবাস বরিশাল জেলায়।

শুরুতে প্রযোজক হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন তিনি। তার আসল নাম মাসুদ পারভেজ হলেও ‘সোহেল রানা’ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। মূলত চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে সোহেল রানা নাম ধারণ করেছিলেন তিনি।

 

১৯৭২ সালে মাসুদ পারভেজ ফিল্মস নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা গড়েন তিনি। অন্তত ৩০টি চলচ্চিত্র তিনি প্রযোজনা করেছেন এই ব্যানারে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’-এর প্রযোজক ছিলেন তিনি। কিন্তু পরে নায়ক খ্যাতির আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় তার প্রযোজক পরিচয়টি।

সোহেল রানা নাম ধারণ করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র ‘মাসুদ রানা’র একটি গল্প অবলম্বনে ১৯৭৪ সালে ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং একই সিনেমার মাধ্যমে তিনি মাসুদ পারভেজ নামে পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন।

‘এপার ওপার’, ‘দস্যু বনহুর’, ‘জীবন নৌকা’-এভাবে একের পর এক প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

সোহেল রানার নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান পারভেজ ফিল্মসের ব্যানারে ৩০টির অধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলো হলো- ওরা ১১ জন, মাসুদ রানা, গুনাহগার, জবাব, যাদুনগর, জীবন নৌকা, যুবরাজ, নাগ পূর্ণিমা, বিদ্রোহী, রক্তের বন্দী, লড়াকু, মাকড়শা, বজ্রমুষ্ঠি, ঘেরাও, চোখের পানি, ঘরের শত্রু, গৃহযুদ্ধ, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা, শত্রু সাবধান, খাইছি তোরে, ভালোবাসার মূল্য কত, অন্ধকারে চিতা, ভয়ংকর রাজা, ডালভাত, চারিদিকে অন্ধকার, রিটার্ন টিকিট ও মায়ের জন্য পাগল।

লালু ভুলু (১৯৮৩), অজান্তে (১৯৯৬), সাহসী মানুষ চাই (২০০৩) তিনটি চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন সোহেল রানা। ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আসরে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন এই মুক্তিযোদ্ধা-অভিনেতা।

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে ডা. জিনাত পারভেজকে বিয়ে করেন সোহেল রানা। তাদের একমাত্র ছেলে মাশরুর পারভেজ জীবরান। অভিনেতা মাসুম পারভেজ রুবেল তার ভাই।

নিউজটি শেয়ার করুন



এ জাতীয় আরো খবর..
ইউটিউবে আমরা...
ফেসবুকে আমরা...