×
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত : তারিখ - ২০২৪-১২-৩১, সময় - ০৮:১৫:১৬শিল্পী, সাহিত্যিক, রাজনীতিক থেকে শুরু করে ২০২৪ সালে অনেক গুণীজনকে হারিয়েছে দেশ। তাদের কেউ আলো ছড়িয়ে গেছেন জীবনভর, কেউবা নিজ কর্ম-গুণে ছিলেন অনন্য। বেদনার সুর ছড়িয়ে অনন্তলোকে পাড়ি জমালেও তাদের চিহ্ন চিরঅম্লান, চিরভাস্বর।
রবীন্দ্রনাথ সরেন: জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন মারা যান ১২ জানুয়ারি। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বারোকনা গ্রামে নিজের বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। ৬৬ বছর বয়সী রবীন্দ্রনাথ সরেন কিডনি ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ সরেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছাড়াও আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামে সহসভাপতি, কাপেং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন।
কবি জাহিদুল হক: ষাটের দশকের কবি, গল্পকার, গীতিকার জাহিদুল হক মারা যান ১৫ জানুয়ারি। সংগীত শিল্পী সুবীর নন্দীর কণ্ঠে তার লেখা ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’ গানটি দেশজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
জাহিদুল হক বাংলা কবিতায় যুক্ত করেছিলেন নতুন মাত্রা। উচ্চকণ্ঠের বিপরীতে সংবেদী অথচ সবল উচ্চারণ তাকে বাংলা কবিতাভুবনে বিশিষ্ট স্থান দান করেছিল। কবিতা ছাড়াও প্রবন্ধ, গল্পে তিনি ছিলেন সমান স্বচ্ছন্দ।
সাংবাদিক সৈয়দ কামাল উদ্দিন আহমেদ: ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘হলিডে’ সম্পাদক, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ কামাল উদ্দিন আহমেদ মারা যান ৫ মার্চ। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
সৈয়দ কামাল উদ্দিনের সাংবাদিকতা শুরু করেন ১৯৬১ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকার মাধ্যমে। বিভিন্ন দৈনিকে তিনি কাজ করেছেন। সর্বশেষ ২০০৫ সালে তিনি হলিডে পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
২০০১ সালে খালেদা জিয়ার শাসনামলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশনে প্রেস মিনিস্টার ছিলেন তিনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে কাজ করা এ সাংবাদিক জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।
ইহসানুল করিম: জাতীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক ইহসানুল করিম মারা যান ১০ মার্চ। ৭৩ বছর বয়সী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যু পর্যন্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব। তার আগে ছিলেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব।
সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবনে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ছাড়াও বিবিসি, পিটিআইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বাংলাদেশ প্রতিবেদক হিসেবেও কাজ করেছেন ইহসানুল করিম।
সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ: সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদের নিজের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। শহীদ সলিম উল্লাহর ছেলে রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। তিনি ছিলেন একাধারে শিল্পী, শিক্ষক ও সুরকার। তার ভাই শিবলী মোহাম্মদ দেশের জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী।
গোলাম আরিফ টিপু: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু মারা যান ১৫ মার্চ। ৯৩ বছর বয়সী এই আইনজীবী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
১৯৫৪ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা টিপু রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে ২০১৯ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়।
ছারছীনার পীর শাহ মোহাম্মদ মোহেবুল্লাহ: পিরোজপুরের ছারছীনার পীর বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর আমির শাহ মোহাম্মদ মোহেবুল্লাহ ১৬ জুলাই মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি।
‘ছারছীনা দারুসুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসা’র প্রতিষ্ঠাতা শাহ নেছারউদ্দিন (রহ.) এর দৌহিত্র শাহ মোহাম্মদ মোহেবুল্লাহ ছিলেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদার্রেসিনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও মসজিদে গাউসুল আজম কমপ্লেক্সের মুতাওয়াল্লি। সারা দেশে প্রায় দুই হাজার মাদ্রাসাসহ বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি।
শাফিন আহমেদ: দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শাফিন আহমেদ ২৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
২০ জুলাই ভার্জিনিয়ায় একটি কনসার্টে গান করার কথা ছিল শাফিনের। কিন্তু তার হার্ট অ্যাটাক হলে শো বাতিল করা হয়। সেদিনই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শাফিনকে, পরে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে; কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গনের দুই মহারথী সংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগম এবং সুরকার কমল দাশগুপ্তের ছেলে শাফিন নিজে ছিলেন বেইজ গিটারিস্ট, সুরকার এবং গায়ক।
মতিয়া চৌধুরী: বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ১৬ অক্টোবর মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
ইডেন কলেজে পড়ার সময় বাম ধারার ছাত্র রাজনীতিতে জড়ান মতিয়া চৌধুরী। ১৯৬১-৬২ মেয়াদে তিনি ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের ভিপি। ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হন।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা ছিল মতিয়া চৌধুরীর। আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্নিঝরা বক্তৃতার জন্য তাকে বলা হত ‘অগ্নিকন্যা’। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে মতিয়া চৌধুরীকে। জেলজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘দেয়াল দিয়ে ঘেরা’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি।
শেরপুর-২ আসনের ছয়বারের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৩ সালে তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৩ সালে তাকে সংসদ উপনেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকার জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয়।