বড়দিন এলেই উপহার, সাজসজ্জা আর কেনাকাটার চাপ অনেক সময় উৎসবের আসল অর্থকে আড়াল করে দেয়। তবে বিশ্বের নানা দেশে বড়দিন এখনো পালিত হয় সৃজনশীলতা ও ভিন্ন রূপে। যেখানে মানুষ আপন করে নেয় তার পরিবার ও আশেপাশের মানুষকে। ভৌগোলিক অবস্থান, ইতিহাস ও সংস্কৃতির ভিন্নতায় বড়দিন পালনের ধরনও ভিন্ন।
কোথাও প্রিয়জনের স্মরণে মোমবাতি জ্বলে, কোথাও পরিবার একসঙ্গে খেলায় মেতে ওঠে, আবার কোথাও মাকড়সার জালও হয়ে ওঠে সৌভাগ্যের প্রতীক।
বিশ্বের এমনই সাতটি দেশের বড়দিনের ঐতিহ্য তুলে ধরা হলো—
আইসল্যান্ড : মোমবাতির আলোয় বই পড়ার রাত
আইসল্যান্ডে বড়দিন মানেই বই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কাগজ ছাড়া প্রায় সবকিছুই রেশনভুক্ত থাকায় বই হয়ে ওঠে বড়দিনের প্রধান উপহার। এই ঐতিহ্য আজও চলছে ‘ইয়োলাবোকাফ্লোড’ বা ‘ক্রিসমাস বইয়ের বন্যা’ নামে।
২৪ ডিসেম্বর রাতে পরিবারগুলো উপহার আদান-প্রদানের পর মোমবাতির আলোয়, পাশে চকলেট আর পানীয় নিয়ে একসঙ্গে বসে নতুন বই পড়েন। এই নিরিবিলি পড়ার সংস্কৃতি এখন আইসল্যান্ডের জাতীয় পরিচয়ের অংশ।
জাপান : প্রিয় মানুষ নিয়ে দিন উদযাপন
খ্রিষ্টানপ্রধান দেশ না হলেও জাপানে বড়দিন আলাদা গুরুত্ব পায়। এখানে বড়দিন মূলত প্রেমিক-প্রেমিকাদের উৎসব। ২৪ ডিসেম্বর রাতটি অনেকটা ভালোবাসা দিবসের মতো—ঝলমলে আলো, বিশেষ ডিনার আর বিলাসবহুল হোটেলে সময় কাটানো।
খাবারেও রয়েছে ভিন্নতা। ক্রিম ও স্ট্রবেরি দিয়ে তৈরি জনপ্রিয় কেক ‘কুরিসুমাসু কেকি’ এই দিনের প্রতীক। পরিবারের ব্যস্ততার মাঝে প্রিয় মানুষটির জন্য একটু সময় বের করাই এই উৎসবের মূল শিক্ষা।
অস্ট্রেলিয়া : পরিবারের ক্রিকেট ম্যাচ
অস্ট্রেলিয়ায় বড়দিন মানে খোলা আকাশ, বারবিকিউ আর পরিবারের সবাইকে নিয়ে ক্রিকেট খেলা। উঠানে বা পার্কে ব্যাট-বল হাতে নেমে পড়ে সবাই। সেখানে বয়স কোনো বাধা নয়। এখানে জয়ের চেয়ে অংশগ্রহণই মুখ্য। ম্যাচে ভুল করলে কেউ রাগ করে না, নিয়মও বদলে যায় প্রয়োজনমতো।
ফিনল্যান্ড : পূর্বপুরুষের স্মরণ
ফিনল্যান্ডে বড়দিন মানেই প্রিয় মৃতজনদের স্মরণ। বড়দিনের আগের রাতে পরিবারগুলো কবরস্থানে গিয়ে মোমবাতি জ্বালান। এতে পুরো কবরস্থান তুষার আর আলোয় এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে। এই নীরব স্মরণ শেষে অনেক পরিবার একসঙ্গে যান ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক সাওনায় (ফিনিশ সংস্কৃতিতে বিশ্রাম এবং অভ্যন্তরীণ শান্তির স্থান)। ব্যস্ত উৎসবের মাঝে এটি হয়ে ওঠে এক গভীর আত্মিক মুহূর্ত।
ইউক্রেন : মাকড়সার জালের সৌভাগ্য
পশ্চিম ইউক্রেনে বড়দিনের গাছে সবচেয়ে পরিচিত সাজ হলো রূপালি মাকড়সার জাল। স্থানীয় একটি লোককথা অনুযায়ী, দরিদ্র এক নারীর গাছে মাকড়সা জাল বুনে দিলে তা সকালে রূপায় রূপান্তরিত হয়—আর তার ঘরে আসে সমৃদ্ধি। তাই আজও কাগজ বা তার দিয়ে তৈরি জাল দিয়ে গাছ সাজানো হয়। এমনকি সত্যিকারের মাকড়সা বা জাল দেখলেও তা সরানো হয় না, কারণ এটি সৌভাগ্যের প্রতীক।
ডেনমার্ক : হাতে বানানো আনন্দ
ডেনমার্কে ‘ক্লিপে ক্লিস্ট্রে’ (কাগজ কেটে জোড়া লাগানো বস্তু) একটি বড়দিনের অপরিহার্য আয়োজন। পরিবার, স্কুল ও অফিসে সবাই মিলে কাগজ কেটে বানানো হয় তারা, হার্ট ও মালা। এই সৃজনশীল আড্ডার সঙ্গে থাকে গরম গ্লগ, কুকি আর ‘হিউগে’ নামের ঐতিহ্যবাহী ডোনাট।
ভেনেজুয়েলা : স্কেটিং করে গির্জায়
ভেনেজুয়েলায় বড়দিনের ভোরের গির্জা সেবায় যাওয়ার এক অভিনব উপায় রয়েছে—রোলার স্কেট। ১৬ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ভোরে ‘মিসা দে আগুইনালদো’ নামের বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নিতে অনেকেই স্কেট করে যান। শিশুরা আগেভাগে ঘুমায়, বড়রা সারা রাত স্কেট করে প্রস্তুতি নেন। নীরব ভোরে প্রতিবেশীদের একসঙ্গে স্কেট করে যাওয়ার দৃশ্য বড়দিনকে করে তোলে প্রাণবন্ত ও সামষ্টিক।
এ জাতীয় আরো খবর..