সকালবেলা নাশতার টেবিলে কিংবা দুপুরের খাবারের পর হালকা ডেজার্ট হিসেবে পাকা পেঁপে বহুদিন ধরেই আমাদের পরিচিত একটি ফল। সহজলভ্য, সুস্বাদু আর পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটি শুধু স্বাদেই নয়, নানা রোগ প্রতিরোধ ও শরীর সুস্থ রাখার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে পেঁপে কখন, কতটা এবং কার জন্য উপকারী এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর জানা জরুরি। চ্যানেল 24 অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন অরোরা স্পেশালাইজড হসপিটালের পুষ্টিবিদ ইশরাত জাহান রিম্মি। তিনি জানান, সঠিক নিয়মে পাকা পেঁপে খেলে এটি হতে পারে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকার একটি কার্যকর স্বাস্থ্যসম্মত উপাদান।
রোগভেদে পাকা পেপের উপকারিতা
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
পাকা পেপেতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে, যা অন্ত্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পেঁপে খেলে মল নরম হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকটাই কমে।
লিভারের যত্নে
পুষ্টিবিদ ইশরাত জাহান রিমি জানান, পেঁপে লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে, যা লিভার সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
অনেকে মনে করেন মিষ্টি ফল মানেই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু পাকা পেপের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলক কম। তাই পরিমাণ বুঝে খেলে ডায়াবেটিস রোগীরাও এটি খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।
হজম ও গ্যাসের সমস্যা কমাতে
পেপেতে থাকা ‘প্যাপেইন’ এনজাইম খাবার দ্রুত হজমে সহায়তা করে। যারা প্রায়ই বদহজম বা গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য পাকা পেঁপে হতে পারে প্রাকৃতিক সমাধান।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে
পাকা পেপেতে থাকা ভিটামিন সি ও শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। নিয়মিত খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমে।
ত্বক ও চুলের যত্নে
ভিটামিন এ ও ই সমৃদ্ধ পেঁপে ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে, ব্রণ কমায় এবং বয়সের ছাপ পড়তে দেরি করে। পাশাপাশি চুলের গোড়া মজবুত করে চুলকে করে ঝলমলে।
নিয়মিত পাকা পেঁপে খেলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়, ফলে সাধারণ সংক্রমণ ও মৌসুমি রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
কখন ও কতটা পেঁপে খাবেন: পুষ্টিবিদ ইশরাত জাহান রিমির মতে—
সকালে: খালি পেটে পেঁপে খাওয়া যাবে না। নাশতার ৩০ মিনিট পরে ১ কাপ (প্রায় ১২০–১৫০ গ্রাম) পাকা পেঁপে খাওয়া সবচেয়ে ভালো।
দুপুরে: খাবারের ৩০ মিনিট পরে ছোট এক বাটি (প্রায় ১০০ গ্রাম) পেঁপে হজমে সহায়ক।
রাতে: রাতের খাবারের সঙ্গে বা পরে পেঁপে না খাওয়াই ভালো। এতে গ্যাস বা হজমের সমস্যা হতে পারে।
সপ্তাহে : ৪–৫ দিন পেঁপে খাওয়া যথেষ্ট।
পরিমাণ অনুযায়ী পরামর্শ
সাধারণ মানুষ: প্রতিদিন ১ কাপ
ডায়াবেটিস রোগী: অর্ধেক কাপ (৭০–৮০ গ্রাম)
ওজন কমাতে চান যারা: বিকেলের হালকা খাবারে ১ কাপ পেঁপে
সতর্কতা : অতিরিক্ত পেঁপে খেলে ডায়রিয়া বা পেটব্যথা হতে পারে। আর গর্ভবতী নারীদের কাঁচা পেঁপে অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত।
সঠিক সময় ও পরিমিত মাত্রায় পাকা পেঁপে খেলে এটি হতে পারে সুস্থ জীবনের সহজ এক চাবিকাঠি। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে হৃদরোগ একাধিক সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান লুকিয়ে আছে এই পরিচিত ফলটিতে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পাকা পেঁপে রাখতে পারেন। এমনকি কাঁচা পেপেও দারুণ উপকারী।
এ জাতীয় আরো খবর..