×

  • নিউজ ডেস্ক

    প্রকাশিত : তারিখ - ২০২৫-১২-২২, সময় - ১৪:০১:০৭
এক সময় কাবা শরিফের গায়ে কালো গিলাফ বা কিসওয়া ছিল না। তবে গিলাফ ছাড়া— এমন দৃশ্য খুব কম মানুষই দেখেছেন। ১৯৪০ সালে তোলা একটি বিরল ছবিতে কাবা শরিফকে কিসওয়া ছাড়া দেখা যায়, যেখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এর লাল ইটের বাইরের গাঁথুনি। অনেক বছর পর প্রকাশ্যে আসা এই ছবিটি ইসলামের পবিত্রতম স্থাপনাকে নতুন এক ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।

কিসওয়ার ইতিহাস ও নির্মাণ ব্যয়

কাবা শরিফের আবরণ হিসেবে পরিচিত কিসওয়া তৈরি করতে ব্যয় হয় প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ সৌদি রিয়াল। প্রায় টাানা ১০ মাসের শ্রমে প্রস্তুত হয় কাবার গিলাফ। সৌদি আরবেই নির্মিত এই কিসওয়া বানানো হয় খাঁটি রেশম দিয়ে, যার মোট ওজন প্রায় ৬৭০ কেজি।

এর মধ্যে সোনায় মোড়ানো রুপার সুতা থাকে প্রায় ১০ কেজি, যা দিয়ে কিসওয়ার ওপর কোরআনের আয়াতগুলো নকশা আকারে লেখা হয়। এই সুতা দিয়েই কিসওয়ার বেল্ট বা উপরের অলংকৃত অংশটি তৈরি করা হয়।

কিসওয়ার গঠন ও নকশা

কিসওয়া তৈরি হয় মোট ৪৭টি বড় কাপড়ের খণ্ড দিয়ে। প্রতিটি খণ্ডের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ মিটার এবং প্রস্থ প্রায় ৯৫ সেন্টিমিটার। কিসওয়ার বেল্টের নিচের অংশে কোরআনের আয়াত সূচিকর্মে ফুটিয়ে তোলা হয়, যা পুরো কাবা ঘিরে থাকে।

এই বেল্টটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম নকশায় তৈরি, যেখানে সোনায় মোড়ানো রুপার সুতা দিয়ে চারপাশ জুড়ে কারুকাজ করা হয়। পুরো কাজটিই করা হয় নিখুঁত হাতের কারিশমায়।

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার

বর্তমানে কাবার কিসওয়া আরও টেকসই করতে এতে কেভলার উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে কিসওয়া উচ্চ তাপমাত্রা ও অতিরিক্ত ওজন সহ্য করতে সক্ষম হয়। এতে দীর্ঘদিন ধরে এর সৌন্দর্য ও দৃঢ়তা বজায় থাকে।

প্রতিবছরের নিয়মিত পরিবর্তন

পবিত্র কাবার কিসওয়া কারখানার মহাব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বাজুদা জানান, প্রতি বছর ইসলামি বর্ষপঞ্জির শুরুতে মুহাররম মাসে নতুন কিসওয়া প্রস্তুতের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

মুহাররম মাসের ১ তারিখ ভোরে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরোনো কিসওয়া খুলে ফেলা হয়। এরপর ধাপে ধাপে নতুন কিসওয়া পরানো হয়, যা আসরের নামাজ পর্যন্ত চলতে থাকে। কাজ শেষ হলে পুরোনো কিসওয়াটি আবার কারখানায় ফিরিয়ে নেওয়া হয় সংরক্ষণের জন্য।

তবে প্রথম দিকে কিসওয়া পরিবর্তনের কাজটি জিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফার দিনে সম্পন্ন করা হতো।  তবে ২০২২ সাল থেকে হিজরি নববর্ষে কাবার গিলাফ পরিবর্তনের নিয়ম করা হয়।

বিশাল কারখানা ও দক্ষ জনবল

কাবার কিসওয়া তৈরির এই কারখানায় কাজ করেন ২৪০ জনের বেশি কারিগর ও প্রশাসনিক কর্মী। রং করা,  ছাপা, সূচিকর্ম, সেলাই ও সংযোজন, প্রতিটি কাজের জন্য রয়েছে আলাদা বিভাগ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি।

এই কারখানায় রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেলাই মেশিন, যার উচ্চতা প্রায় ১৬ মিটার। এ ছাড়া এখানে রয়েছে পরীক্ষাগার, প্রশাসনিক বিভাগ এবং কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থাও।

কিসওয়া শুধু একটি কাপড় নয়, এটি মুসলিম উম্মাহর বিশ্বাস, ইতিহাস ও শ্রদ্ধার প্রতীক। আর সেই পবিত্র আবরণের আড়ালে থাকা কাবার প্রকৃত অবয়বের বিরল দৃশ্য ইতিহাসে এক অনন্য দলিল।

সূত্র : আল আরাবিয়া

নিউজটি শেয়ার করুন



এ জাতীয় আরো খবর..
ইউটিউবে আমরা...
ফেসবুকে আমরা...