ইবাদতের গ্রহণযোগ্যতা শুধু বাহ্যিক রূপে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা নির্ভর করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শেখানো পদ্ধতি ও আন্তরিকতার ওপর। নামাজ ইসলামের স্তম্ভ হলেও অনেক সময় অজ্ঞতা বা গাফিলতির কারণে মানুষ এর মূল রূহ ও শিষ্টাচার থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। কারণ নামাজ আদায় করা ঈমানের অপরিহার্য দাবি। নামাজের রুকূ‘ ও সিজদার যথাযথ আদায় শুধু ফরজ আদায়ের শর্তই নয়; বরং তা সুন্নাহর অনুসরণেরও স্পষ্ট প্রমাণ।
সাহাবায়ে কেরামের যুগে এমন গাফিলতি দেখলে তাঁরা নিঃসংকোচে সতর্ক করতেন। কারণ নামাজের বিকৃতি ঈমানের পথচ্যুতিরই একটি লক্ষণ। নিচের হাদিসটি দেখুন- عَنْ زَيْدَ بْنَ وَهْبٍ قَالَ رَأَى حُذَيْفَةُ رَجُلاً لاَ يُتِمُّ الرُّكُوعَ وَالسُّجُودَ قَالَ مَا صَلَّيْتَ وَلَوْ مُتَّ مُتَّ عَلَى غَيْرِ الْفِطْرَةِ الَّتِي فَطَرَ اللهُ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم عَلَيْهَا.
‘যায়দ ইবনে ওয়াহব (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযাইফা (রা.) এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে রুকূ‘ ও সিজদা্ ঠিকমত আদায় করছে না।
তিনি তাকে বললেন, তোমার সালাত হয়নি। যদি তুমি (এই অবস্থায়) মারা যাও, তাহলে আল্লাহ্ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যে আদর্শ দিয়েছেন সে আদর্শ হতে বিচ্যুত অবস্থায় তুমি মারা যাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৯১) হাদিসের শিক্ষা
১. নামাজের প্রতিটি রুকন যথাযথভাবে আদায় করা ফরজ। রুকূ‘ ও সিজদা তাড়াহুড়ো করে বা অসম্পূর্ণভাবে আদায় করলে নামাজ সহিহ হয় না।
বাহ্যিকভাবে নামাজ পড়া হলেও, শরিয়তের দৃষ্টিতে তা নামাজ হিসেবে গণ্য নাও হতে পারে। ২. সুন্নাহর অনুসরণই ইবাদতের মানদণ্ড। ইবাদতে নিজের খেয়ালখুশি বা অভ্যাস নয়; বরং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দেখানো পদ্ধতিই একমাত্র গ্রহণযোগ্য আদর্শ।
৩. নামাজের অবহেলা ঈমানের জন্য ভয়াবহ বিপদের কারণ। হুযাইফা (রা.)-এর কঠোর সতর্কবাণী থেকে বোঝা যায়; নামাজে গাফিলতি মানুষকে ধীরে ধীরে নববী আদর্শ থেকে বিচ্যুত করে দেয়।
৪. ভুল দেখলে সংশোধন করা মুমিনের দায়িত্ব। সাহাবায়ে কেরাম অন্যের নামাজে ত্রুটি দেখলে নীরব থাকতেন না; বরং কল্যাণকামী উপদেশের মাধ্যমে সংশোধনের চেষ্টা করতেন।
৫. মৃত্যুর সময় ঈমানের অবস্থা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, যে ব্যক্তি সুন্নাহ থেকে বিচ্যুত অবস্থায় ইবাদত করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তার পরিণতি ঈমানের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
নামাজ এমন এক ইবাদত, যার ভেতর দিয়েই একজন মুমিনের আনুগত্য, বিনয় ও রাসূলের অনুসরণ প্রকাশ পায়। কিন্তু যখন নামাজ শুধু তাড়াহুড়ো করা কিছু ভঙ্গিতে পরিণত হয়, তখন তা আর আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য থাকে না।
নামাজের সৌন্দর্য ও গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে এর প্রতিটি রুকন সঠিকভাবে আদায় করার ওপর। রুকূ‘ ও সিজদায় অবহেলা শুধু আমলের ঘাটতি নয়; বরং তা সুন্নাহ থেকে দূরে সরে যাওয়ার লক্ষণ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে নবী (সা.) এর দেখানো উপায়ে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন।
এ জাতীয় আরো খবর..