×
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত : তারিখ - ২০২৫-১২-১৭, সময় - ০৬:০৭:৩০ঘটনাটি এমন— একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের দুই দলে ভাগ করে পড়াতেন। একদল ছিল মনোযোগী, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও অধ্যবসায়ী; অন্যদল উদাসীন ও অবহেলাপরায়ণ। শিক্ষক সচেতনভাবেই তাদের আলাদা রাখতেন, যেন পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট না হয় এবং মনোযোগী ছাত্ররা তাদের একাগ্রতা ধরে রাখতে পারে।
একদিন বিশেষ কারণে সব ছাত্রকে একসঙ্গে বসানো হলো। অবাক করার বিষয়— খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মনোযোগী ছাত্রদের মনোসংযোগ ভেঙে যেতে লাগল, পড়ায় ঢিলেমি চলে এলো। তখন শিক্ষক গভীরভাবে উপলব্ধি করলেন এক চিরন্তন সত্য— ‘ভালো জিনিস খারাপের সঙ্গে মিশলে ধীরে ধীরে নিজের ভালোত্ব হারিয়ে ফেলে।’
এই সাধারণ ঘটনাটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে ইসলামের এক গভীর শিক্ষা। ইসলাম শুধু মানুষকে নামাজ-রোজার দিকেই আহ্বান করে না, বরং মানুষের সঙ্গ, পরিবেশ ও চরিত্র গঠনের প্রতিও অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আহ্বান করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
الْمَرْءُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلْ
‘মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠে। সুতরাং তার বন্ধু নির্বাচনের সময় এ বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত, সে কাকে বন্ধু নির্বাচন করছে।’ (তিরমিজি ২৩৭৮, আবু দাউদ ৪৮৩৩, মিশকাত ৫০১৯)
অন্য হাদিসে নবী (সা.) আরও বলেন—
لَا تُصَاحِبْ إِلَّا مُؤْمِنًا وَلَا يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلَّا تَقِيٌّ
‘মুমিন ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু বানাবে না এবং তোমার খাদ্য আল্লাহভীরু লোক ছাড়া যেন অন্য কেউ না খায়।’ (তিরমিজি ২৩৯৫, আবু দাউদ ৪৮৩২, মিশকাত ৫০১৮)
শুধু তা-ই নয়, বন্ধুত্ব করার আগে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন তার পরিচয় জেনে নেওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন নবিজী (সা.)। হাদিসে পাকের বর্ণনায় নবিজী (সা.) বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেছেন—
إِذَا آخَى الرَّجُلُ الرَّجُلَ فَلْيَسْأَلْهُ عَنِ اسْمِهِ وَاسْمِ أَبِيهِ وَمِمَّنْ هُوَ؟ فَإِنَّهُ أَوْصَلُ للمودَّة
‘যখন কোনো মানুষ কোনো মানুষের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ব (বন্ধুত্ব) স্থাপন করে, সে যেন তার নাম, তার পিতার নাম এবং (সে) কোন গোত্রে জন্মলাভ করেছে তা জিজ্ঞাসা করে নেয়। কেননা এটা বন্ধুত্বকে সুদৃঢ় করে।’ (তিরমিজি, মিশকাত ৫০২০)
অর্থাৎ, মানুষের চরিত্র, চিন্তাধারা ও আমল অনেকাংশেই নির্ভর করে তার সঙ্গের ওপর। যেমন সুগন্ধির দোকানে গেলে অল্প হলেও সুবাস লেগে যায়, আর কামারের দোকানে গেলে আগুনের আঁচ বা পোড়া গন্ধ লাগার আশঙ্কা থাকে।
আজকের সমাজে আমরা অনেক সময় ভাবি— ‘আমি ভালো থাকব, অন্যরা যেমনই হোক।’ কিন্তু বাস্তবতা হলো— পরিবেশ ও সঙ্গ ধীরে ধীরে মানুষের ভেতরে প্রভাব ফেলে। নামাজি মানুষ যদি নিয়মিত উদাসীনদের সঙ্গে মেশে, তবে তার আমলেও শৈথিল্য আসতে পারে। ঠিক যেমন সেই মনোযোগী ছাত্রদের একাগ্রতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়—
> ভালো মানুষদের সঙ্গে চলাফেরা করতে
> নেক পরিবেশে নিজেকে রাখতে
> আর এমন সঙ্গ থেকে দূরে থাকতে, যা ঈমান ও চরিত্র দুর্বল করে
যেমন মহান আল্লাহ তাআলা বলেন—
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ
‘যারা তাদের রবকে ডাকে— তাদের সঙ্গেই নিজেকে ধরে রাখো।’ (সুরা কাহফ: আয়াত ২৮)
এখান থেকে শিক্ষা কী?
ভালো হওয়া শুধু যথেষ্ট নয়— ভালো থাকতে হলে ভালো পরিবেশ ও ভালো সঙ্গ বেছে নিতে হয়। নিজের ঈমান, আমল ও চরিত্র রক্ষার জন্য সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়াই একজন মুমিনের পরিচয়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এমন সঙ্গ বেছে নেওয়ার তাওফিক দিন, যা আমাদের দুনিয়া ও আখেরাত— উভয় জীবনকে সুন্দর করে তোলে। আমিন।
