ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলায় ‘বাবরি মসজিদ’ নামে মসজিদ নির্মাণ করা হবে এবং আগামী তিন বছরের মধ্যেই সেই মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হবে— এমনটাই জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া বিধায়ক হুমায়ুন কবির। তিনি বলেছেন, এটা অযোধ্যা নয়, এখানে কেউ বাবরি মসজিদে স্পর্শও করতে পারবে না। এই মসজিদের নির্মাণ ঠেকানোর ক্ষমতা কোনও কর্তৃপক্ষ বা রাজনৈতিক শক্তির নেই।
তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর এনডিটিভিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে হুমায়ুন কবির জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে এই মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হবে এবং প্রকল্পের জন্য অর্থ ও অন্যান্য প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা অযোধ্যা নয়, এটা মুর্শিদাবাদ। এটা আমার চ্যালেঞ্জ। এখানে কেউ এসে বাবরি মসজিদে হাত দিতে পারবে না।’
৬৪ বছর বয়সী এই বিধায়ক বলেন, তার এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা এবং ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়। ওই রায়ে বিতর্কিত জায়গাটি রামমন্দিরের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। তিনি বলেন, আদালতের রায় তিনি মেনে নিলেও, তাতেই তিনি নিশ্চিত হন যে বাবরি মসজিদ এখন অন্য কোথাও নির্মাণ করতে হবে।
হুমায়ুন কবির বলেন, ‘১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার সময়ই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট জমি রামমন্দিরকে দেয়ার পর আমি দৃঢ়ভাবে ঠিক করি, বাবরি মসজিদ এবার মুর্শিদাবাদেই হবে। বাবরের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। বাবরি মসজিদ নামটি দিয়েছি, কারণ মানুষের মনে এখনও সেই যন্ত্রণা রয়েছে। নির্বাচনের সময় ‘জয় শ্রী রাম’ বলা যদি ঠিক হয়, তাহলে ‘আল্লাহু আকবর’ বলাও ঠিক।’
বরখাস্ত হওয়া এই বিধায়ক দাবি করেন, মসজিদ নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সেই অর্থ তার বাড়িতেই সংরক্ষিত আছে। তিনি বলেন, সমর্থক ও দাতাদের কাছ থেকে ২০ কোটির বেশি রুপি এসেছে এবং এই পুরো অর্থই মসজিদ নির্মাণে ব্যয় করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত মসজিদ নির্মাণের জন্য দুই কোটির বেশি টাকা পাওয়া গেছে। এই টাকা আমার বাড়ির একটি কক্ষে তালাবদ্ধ রয়েছে। আমরা ২৫ বিঘা জমি কিনেছি, কাগজপত্রের কাজ চলছে। ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তুতি শুরু হবে এবং তিন বছরের মধ্যে মসজিদ সম্পূর্ণ হবে। এখানে প্রতি শুক্রবার নামাজ আদায় হবে এবং ইতোমধ্যেই লাখ লাখ ইট এসে পৌঁছেছে।’
হুমায়ুন কবির জানান, তার এই কর্মকাণ্ডের কারণেই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি বলেন, তিনি নিজে দল ছাড়েননি; বরং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে দলবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বহিষ্কার করেছেন। তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আমাকে বহিষ্কার করেছেন। আগের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর আজকের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য। আগে তিনি সবার কথা শুনতেন, মানুষের সমস্যার কথা বুঝতেন। এখন তিনি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন। জেলা নেতৃত্ব আমার সঙ্গে আলোচনা করেছিল, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার কথা শোনেননি।’
হুমায়ুন কবির অভিযোগ করেন, বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেস কার্যত নির্বাচিত নেতৃত্বের বদলে রাজনৈতিক পরামর্শকদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আজ তৃণমূল কংগ্রেস চালাচ্ছে আইপ্যাক। আগে ছিলেন প্রশান্ত কিশোর, এখন আছেন প্রতীক জৈন। কারা দলে থাকবে, কারা বাদ পড়বে— এই সিদ্ধান্তগুলো তাদের পরামর্শেই নেয়া হচ্ছে।’
তবে তৃণমূল কংগ্রেস হুমায়ুন কবিরের এসব দাবি নাকচ করেছে এবং তার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ব্যঙ্গ করেছে। দলীয় নেতাদের মতে, তিনি অবাস্তব দাবি করছেন এবং রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা করছেন। অবশ্য বরখাস্ত হলেও হুমায়ুন কবির জানান, তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন না।
বরং চলতি মাসের শেষ দিকে তিনি একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, আগামী ২২ ডিসেম্বর বহরমপুরে এক জনসভায় নতুন দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। সেখানে এক লাখ মানুষের সমাগম হবে বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, নতুন দল ১৩৫টি বিধানসভা আসনে নির্বাচন করবে এবং বিজেপি ও তৃণমূল— দু’দলকেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে বাধা দেবে।
এ জাতীয় আরো খবর..