×
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত : তারিখ - ২০২৫-০১-১৫, সময় - ০৮:৪৯:৫৪দেশের মানচিত্রের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। হিমালয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানকার মাটিতে পাথর এবং বালির আধিক্য বেশি। ফলে চা বাগানে কাজসহ নদীর পাথর সংগ্রহ করেই এখানকার মানুষ জীবন-জীবিকা চালিয়ে আসছে। কিন্তু
এখন নদীতে নেই পানি, মিলছে না আগের মতো পাথরও। এতে কমেছে শ্রমিকদের আয়। নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও দু-মুঠো ভাতের আশায় রোজ পাথর খুঁজে ফেরেন হাজারো শ্রমিক।
তেঁতুলিয়ার সর্দারপাড়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব জাকির হোসেন। জীবনের তিন দশক মহানন্দা থেকে পাথর তুলে সংসার চালিয়েছেন। কিন্তু নদীতে এখন আর আগের মতো পাথর না মেলায় হতাশা তার চোখে মুখে।

সর্দারপাড়া গ্রামের পাথর শ্রমিক জাহাংগীর, বারঘরিয়া গ্রামের আশরাফুল এবং সাহেবজোত গ্রামের পাথর শ্রমিক হবিবর রহমান বলেন, মহানন্দা নদীর পাথর তোলে আমাদের পূর্বপুরুষেরা জীবন জীবিকা নির্বাহ করেছে। আমরাও এই নদীতে পাথর তুলে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা চালিয়ে আসছি। আমাদের ছেলে-মেয়েরাও পড়াশোনার ফাঁকে নদীতে পাথর তোলার কাজ করেন। বর্তমানে তেঁতুলিয়া উপজেলার বাসিন্দারা ছাড়াও পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন থানা এবং ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী এলাকার দরিদ্র লোকজন এই এলাকা থেকে নদীতে পাথর তোলার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
পাহাড় থেকে নেমে আসা বিভিন্ন নদ নদীর হিম শীতল বরফগলা পানিতে নেমে পাথর সংগ্রহকারী এই মানুষগুলো বর্তমানে শরীরে চর্ম রোগ, এলার্জি, বাথ-ব্যথাসহ নানা রোগে ভুগছে। একজন শ্রমিক দিনে ৫/৬ ঘণ্টা পাথর সংগ্রহ করে ৮শ’ থেকে হাজার টাকা আয় করে। প্রতি ঘনফুট (এক সেফটি) পাথর বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শ্রমিকরা জানায়, ভারতের বিএসএফ এখন পাথর তোলতে বাঁধা দিচ্ছে। এ ছাড়াও নদীতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় আগের মতো পাথর উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না ফলে সারাদিন পরিশ্রম করেও পাথরসংগ্রহ করতে পারছি না। এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় জীবন জীবিকা আটকে গেছে।

মহানন্দা নদীর জলরাশিতে ভোর বেলা যখন সূর্যের লাল রশ্মি ঝলঝল করে সোনালী আলোর ঝিলিক পড়ে। তখন জেলেদের ন্যায় মোটরগাড়ির টিউব, নেট, কোঁদাল আর বালু কাটার যন্ত্র নিয়ে হাজারো শ্রমিক দিগবেদিক ছুটে চলে মহানন্দায় নুড়ি পাথর সংগ্রহের কাজে। আশির দশকের আগ থেকে মহানন্দা নদীতে শ্রমিকদের নুড়ি পাথর সংগ্রহ শুরু হলেও পাথরের কোনো কমতি ছিল না। বর্তমানে নদীতে চর পড়ে যাওয়ায় এবং পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে।
পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি বলেন, ‘বর্তমানে এই নদী থেকে খুব কম পাথর পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে পাথর শ্রমিকরা কর্মসংস্থানের সংকটে পড়েছে। তাদের কর্মসংস্থানের সমস্যা দূরীকরণের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে এবং আমরা নিজেরাও প্রণোদনা দেয়ার চেষ্টা করছি।’
মহানন্দা কেবল একটি নদী নয়, হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকার নাম। স্থানীয়দের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এই নদী টিকিয়ে রাখার জোর দাবি স্থানীয়দের।
