২০২৪ সালের চালিকাশক্তি হবে এআই: বিল গেটস

প্রতিবছরের মতো এবারও নিজের ব্লগ পোস্টে আগামী বছরের গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি সম্পর্কে লিখেছেন তথ্য-প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও সমাজসেবক বিল গেটস। নতুন বছরে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে কী কী ঘটতে পারে, সে বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ব্লগ পোস্টে। এর মধ্যে একটি বড় স্থান রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ের। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী এই উদ্যোক্তার মতে, নতুন বছরের অনেক উদ্ভাবন ও অগ্রগতির চালিকাশক্তি হবে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

বিল গেটস লিখেছেন, ২০২৪ সালে যেসব প্রযুক্তি আসবে সেগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে সে ছক এঁকে দেবে। বিশ্বের মোড় ঘুরিয়ে দেবে—এআইয়ের এমন কিছু ব্যবহার নিয়ে কথা বলেছেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা। তাঁর মতে, এআই ব্যবহার করে নানা সমস্যা ও আর্থ-সামাজিক বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে। এমন গতিতে নতুন নতুন সব উদ্ভাবন দেখা যাবে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

নতুন নির্বাচনের ওপর স্বাস্থ্য ও জলবায়ু খাতের ভবিষ্যৎ
বিল গেটস তাঁর পড়া সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, বিশ্বে অতীতের যেকোনো বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে বেশি লোক ভোট দিতে পারে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬০টি দেশের নাগরিকরা আগামী বছর সরকারের সব স্তরের নেতা নির্বাচন করতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ওই দেশগুলোতে ৪০০ কোটির বেশি লোকের বাসস্থান, যা বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি।

গেটস নোটে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় নির্বাচন বেশির ভাগ মনোযোগ আকর্ষণ করলেও বিশ্বজুড়ে হাজারো গভর্নর, মেয়র, কাউন্সিলরও নির্বাচিত হবেন।

প্রতিবছরের নির্বাচনই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ২০২৪-এর ভোটারদের অতি বিশাল সংখ্যার কারণে এসব নির্বাচনের ফলগুলো গোটা বিশ্বের ভবিষ্যতের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

অ্যান্টিবায়োটিকের ওষুধ প্রতিরোধ ঠেকাবে এআই টুল
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের সঙ্গে লড়তে অ্যান্টিবায়োটিক ম্যাজিকের মতো কাজ করে। কিন্তু এর অতি ব্যবহার ক্ষতিকর। অতি ব্যবহারে রোগজীবাণুগুলো শিখে যায় কিভাবে ওষুধের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে হবে।

সারা বিশ্বেই সমস্যাটি প্রকট হয়ে উঠছে; বিশেষ করে আফ্রিকায়।
গেটস লিখেছেন, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ সৃষ্টি হওয়া ও এইডস ঠেকাতে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য তথ্য আরো সহজে পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে এআই। যেমন : এআই টুলের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করা হবে কোন এলাকায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ কতটা বাড়ছে। এআই বাতলে দেবে করণীয়ও।

বিল গেটস বলেছেন, তাঁর কাজ সব সময় একটি মূল ধারণাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। আর তা হচ্ছে উদ্ভাবনই অগ্রগতির চাবিকাঠি। এ কারণেই তিনি মাইক্রোসফট শুরু করেছিলেন। উদ্ভাবনের তাগিদেই মেলিন্ডার সঙ্গে মিলে গেটস ফাউন্ডেশন শুরু করেছিলেন দুই দশকেরও বেশি আগে। বিল গেটস বলেন, উদ্ভাবনের কারণেই গত শতাব্দীতে মানুষের জীবনে অনেক উন্নতি হয়েছে। বিদ্যুৎ ও গাড়ি থেকে শুরু করে ওষুধ ও বিমানের উদ্ভাবন বিশ্বকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়েছে। আজ তথ্য-প্রযুক্তি বিপ্লবের কারণে মানবজাতি অনেক বেশি উৎপাদনশীল। সবচেয়ে সফল অর্থনীতির দেশগুলো উদ্ভাবনী শিল্প দিয়েই চালিত হয়, যা পরিবর্তিত বিশ্বের চাহিদা মেটাতে ক্রমেই বিকশিত হতে থাকে।

সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি দুই মিনিটে একজন নারীর মৃত্যু হয়। ভয়ংকর এই পরিসংখ্যান বদলে দিতে সহায়তা করবে এআই। ভারতের মুম্বাইভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ‘আরমান’-এর গবেষকরা এআই ব্যবহার করে গর্ভাবস্থার নানানরকম ঝুঁকি কমাতে কাজ করছেন। তাঁদের লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল একদিন স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় টুল হয়ে উঠবে। ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থায় রোগীকে আরো উন্নত চিকিৎসা দিতে নার্স বা মিডওয়াইফকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারবে।

বিল গেটস বলেছেন, বিশাল পরিসরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে নতুন ওষুধ উদ্ভাবন করতে হবে। ওষুধ আবিষ্কারের জন্য প্রচুর ডাটা ছেকে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। এআইয়ের মাধ্যমে খুব দ্রুতগতিতে এই কাজটি করা সম্ভব। কিছু কম্পানি এরই মধ্যে এই প্রক্রিয়ায় ক্যান্সারের ওষুধ তৈরির কাজ শুরু করেছে।

বিল গেটস লিখেছেন, এ ধরনের প্রকল্প ব্যাপকভাবে সফল হতে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ ব্যাপক পরিসরে এআইয়ের ব্যবহার শুরু করবে ১৮ থেকে ২৪ মাস পর। এআইয়ের ব্যবহার আফ্রিকায় বাড়বে আরো তিন বছর পর। সূত্র : গেটস নোটস

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.