৬০ সংরক্ষিত আসনের দাবি হিন্দু মহাজোটের

হিন্দু সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষায় জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট নামের একটি সংগঠন। এ সময় তারা একটি সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠারও দাবি জানিয়েছে। শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান মহাজোটের নেতারা।

নড়াইলের কলেজ অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা, সাভারে কলেজ শিক্ষক হত্যা, মিথ্যা অজুহাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হিন্দুদের বিরুদ্ধে মামলা, হামলা, জমি দখল, মন্দির-প্রতিমা ভাঙচুরের প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় গত ছয় মাসে হিন্দু নির্যাতনের রিপোর্ট পেশ করেন মহাজোটের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। উপস্থিত ছিলেন হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি দীনবন্ধু রায়, সিনিয়র সহসভাপতি প্রদীপ কুমার পাল প্রমুখ।

গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় স্বস্তিতে নেই। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো স্থানে ঘটছে হৃদয়বিদারক ঘটনা। হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মঠ-মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর হত্যা, হত্যাচেষ্টা, জমি দখল, দেশ ত্যাগে বাধ্যকরণসহ নানা নির্যাতন অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায় দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিন যাপন করছে। এর মধ্যে নতুন উপসর্গ হিন্দু শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত করতে অভিনব কৌশল। যার দৌরাত্ম্য দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। পুলিশ ও প্রশাসনের উপস্থিতি ও সক্রিয় সহযোগিতায় গলায় জুতার মালা পরানোসহ নানাভাবে হেনস্তা, অপমান-অপদস্থ করে শিক্ষকদের মানমর্যাদা ধূলিস্যাৎ করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, চলতি বছর ৩০ জানুয়ারি থেকে গত ছয় মাসে দেশের সংখ্যলঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ৭৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ৬২০ জনকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে ১৪৫ জনকে। জখম ও আহত করা হয়েছে ১৮৩ জনকে। নিখোঁজ হয়েছে ৩২ জন। চাঁদাবাজি হয়েছে ২৭ কোটি দুই লাখ ৩০ হাজার টাকার। পরিবার ও মন্দির লুট হয়েছে ১৫৬টি, বসতবাড়ি হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ৪৬৮টি। অগ্নিসংযোগ ৩৪৩টি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৯৩টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভূমি দখল হয়েছে দুই হাজার ১৫৯ একর ৩৬ শতাংশ।
গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক আরো বলেন, ‘আজ আপনাদের মাধ্যমে সরকারকে বলতে চাই, সরকারি দলের নেতকর্মীদের ইন্ধনেই বারবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবনে বিভীষিকা নেমে এসেছে। সে কারণে এই সরকারের ওপর হিন্দু সম্প্রদায় আর আস্থা রাখতে পারছে না। শেষ ভরসা হিসেবে আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হিন্দু সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষা করতে তাদের ওপর সহিংসতা ও নির্যাতন নিরোধ কল্পে, গণতন্ত্র অর্থবহ করতে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে এবং একটি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠান দাবি জানাচ্ছে মহাজোট।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.