যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায়

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি রোজা রাখা। আল্লাহ প্রত্যেক সাবালক ও সুস্থ মুসলিম নর-নারীর ওপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো।

’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনটি বিষয় থেকে বিরত থাকাই রোজা —ক. স্ত্রী সম্ভোগ, খ. খাবার গ্রহণ, গ. পানীয় গ্রহণ। কেউ স্ত্রী সম্ভোগ ও পানাহারে লিপ্ত হলে তার রোজা ভেঙে যাবে। তা ছাড়া নারীদের ঋতুস্রাবের কারণেও রোজা ভেঙে যায়। তবে এমন কিছু কারণ রয়েছে, যার কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না।

নিম্নে তা তুলে ধরা হলো-

১. ভুল করে কোনো কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভঙ্গ হবে না। [বুখারি শরিফ ১/২৫৯]।

২. মশা-মাছি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃত পেটের ভেতর ঢুকে গেলেও রোজা ভাঙবে না। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৬/৩৪৯]।

৩. অনিচ্ছাকৃত বমি হলে [এমনকি মুখ ভরে হলেও] রোজা ভাঙবে না। তেমনি বমি মুখে এসে নিজে নিজেই ভেতরে চলে গেলেও রোজা ভাঙবে না। [তিরমিযী ১/১৫৩]।

৪. রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। তবে রোজা স্মরণ হওয়ামাত্র পানাহার ছেড়ে দিতে হবে।

[মুসলিম ১/২০২]।
৫. দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে পেটের মধ্যে না গেলে রোজা ভাঙবে না। [শামী ৩/৩৬৭]।

৬. কোনো খাদ্যদ্রব্য বুট বা ছোট ছোলার কম পরিমাণ যদি দাঁতের সঙ্গে লেগে থাকে ও গলার ভেতর চলে যায়, তাহলে রোজা ভাঙবে না [হিন্দিয়া ১/২০২]।

৭. হ্যাঁ, দাঁত থেকে বের করে হাতে নিয়ে স্বেচ্ছায় খেয়ে ফেললে রোজা নিশ্চিতভাবে ভেঙে যাবে। [হিন্দিয়া ১/২০২]।

৮. অতিরিক্ত গরম বা পিপাসার কারণে যদি গোসলের মাধ্যমে শরীরকে ঠাণ্ডা করা হয়, তাহলেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। [হিন্দিয়া ১/২০৩]।

৯. কুলি করার পর পানির অবশিষ্ট আর্দ্রতা থুথুর সঙ্গে গিলে ফেললে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। [হিন্দিয়া ১/২০৩]।

১০. ঘাম অথবা চোখের অশ্রুর দু-এক ফোঁটা যদি অনিচ্ছায় মুখে চলে যায়, তাহলে রোজা নষ্ট হবে না। [হিন্দিয়া ১/২০৩]।

১১. কানের ময়লা বের করার দ্বারাও রোজা ভাঙবে না। [মারাকিল ফালাহ ৩৪২]।

১২. যদি পান খাওয়ার পরে খুব ভালোভাবে কুলি করার পরও রোজা অবস্থায় থুথুর সঙ্গে লাল রং বের হয়, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। [হিন্দিয়া ১/২০৩]।

১৩. নাক এত জোরে সাফ করা, যার ফলে কফ গলার মধ্যে চলে যায়, তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। [দুররে মুখতার ৩/৩৭৩]।

১৪. রোজা অবস্থায় আতর বা ফুলের ঘ্রাণ নিলেও কোনো সমস্যা নেই। [মারাকিল ফালাহ, ৩৬১]।

১৫. শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলে রোজা ভাঙবে না, বরং তা বৈধ। [মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৪/৩১৩]।

১৬. রোজা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত মুখের মধ্যে ধুলাবালি ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না। [দুররে মুখতার ৩/৩৬৬]।

১৭. যদি রোজাদারের গোসল করার সময় অথবা বৃষ্টিতে ভেজার সময় কানের মধ্যে অনিচ্ছায় পানি চলে যায়, তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে রোজা নষ্ট হবে না। [ফাতহুল কাদীর ২/৩৪৭]।

১৮. সুস্থ অবস্থায় রোজার নিয়ত করার পর যদি অজ্ঞান, অচেতন বা পাগল হয়ে যায়, তাহলে রোজা নষ্ট হবে না। [সুনানে কুবরা বায়হাকি ৪/২৩৫]।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.