৩৩০০ টাকার হাঁসের খামার থেকে ৫ লাখ টাকা আয়

লক্ষ্মীপুরে ৩৩০০ টাকা পূঁজি নিয়ে হাঁসের খামার করে এখন বছরে ৫ লাখ টাকা আয় করছেন এক দম্পতি। ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর দৃঢ় মনোবল তাদের সফল খামারি হিসেবে গড়ে তুলেছে। বেকারত্ব আর অভাব অনটনের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। তাদের এমন সফলতায় এলাকার অনেকেই এখন হাঁস পালন ও খামার স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পূর্ব নন্দনপুর গ্রামে মহিউদ্দিন বাবুল ও সুমাইয়া ইসলাম দম্পতির চিনা জাতের হাঁসের খামার এটি। এই দম্পতি ২০০৪ সাল থেকে প্রথমে শুরু করেন মুরগীর খামার। খাদ্যসহ সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে মুরগীর খামারে লোকসান হয় তাদের। এরই মাঝে স্ত্রী সুমাইয়া ইসলাম লক্ষ্মীপুর যুব উন্নয়ন অফিস থেকে হাঁস পালনের প্রশিক্ষণ নেন। করোনার শুরুর দিকে ঘরবন্দি হওয়ার পর অভাব অনটনের দেখা দিলে ৩৩টি হাঁস কিনে শুরু করেন হাঁস পালন। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। এভাবেই শুরু হয় বাবুল-সুমাইয়া দম্পতির হাঁসের খামারে পথ চলা। এখন তাদের খামারে প্রায় ৫০০ হাঁস আছে।

প্রতিদিন হাঁসগুলো গড়ে ১৫০টি ডিম দেয়। কিছু ডিম বিক্রি করেন। বাকি ডিম থেকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বাচ্চা ফোটান। হাঁসের ১ দিনের বাচ্চা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী হাঁস বিক্রি করেন জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে। এর দাম ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এতে এ দম্পতির বছরে আয় হয় ৫ লাখ টাকা।

মহিউদ্দিন বাবুল ও সুমাইয়া বলেন, ‘১০/১১ বছর মুরগীর খামার করে লোকসান হয়েছে। করোনার সময় সংসারে অভাব দেখা দেয়। কোনো কাজও খুঁজে না পেয়ে স্ত্রীর নেওয়া প্রশিক্ষণে কিছু হাঁস পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। নিজে না খেয়ে সন্তানের মতো হাঁসগুলোকে লালন-পালন করেছি। এখন প্রতিদিন টাকার দেখা পাচ্ছি। হাঁসের খাবারের পিছনে খুব একটা বেশি খরচ করতে হয় না। চিনা জাতের এই হাঁসগুলোর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। প্রতি মাসে ডিম ও হাঁস বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে তার আয় হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এ দিয়েই ভালোভাবে সংসার চলছে বাবুলের।

এ দম্পতির অভিযোগ, হাঁস পালনে প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন না। করোনাকালীন সময়ে প্রণোদনায় নাম অন্তভূক্তি করে নিলেও তারও দেখা মেলেনি। খামারের প্রসার ঘটাতে সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা তাদের।

স্থানীয়রা জানায়, বাবুলের হাঁসের খামার দেখতে অনেকেই আসছেন। হাঁসের খামার দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন এ এরকম খামার করার। তাছাড়া গ্রামের মানুষের ডিম বা হাঁস কিনতে বাজারে যেতে হয় না।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সুমাইয়া খুব মেধাবী। যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর নিজ উদ্যোগে খামার দিয়ে এখন স্বাবলম্বী। তার হাঁসের খামারের পরিধি বাড়াতে যুব উন্নয়ন থেকে ঋণ সহযোগিতা দেওয়া হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. যোবায়ের হোসেন বলেন, এটি ভালো উদ্যোগ। স্বল্প খরচে হাঁস চাষ করে বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি প্রচুর আয় করা সম্ভব। এ ছাড়া হাঁস পালনের জন্য লক্ষ্মীপুর উপযুক্ত স্থান। ডিম ও হাঁসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় খামারিরা। শিগগিরই হাঁসের খামারটি পরিদর্শন করা হবে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে হাঁস পালনকারীদের পরামর্শ ও সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বান দেন এ কর্মকর্তা।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.