২৮ বছর পর শিরোপা আর্জেন্টিনার, মেসির খরা কাটলো

৩৪ বছর বয়স, হয়তো ২০২২ বিশ্বকাপের পরই বুটজোড়া তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেবেন। ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারে সব ধরনের অর্জন থাকলেও জাতীয় দলের হয়ে শিরোপার স্বাদ পাচ্ছিলেন না আর্জেন্টাইন মহানায়ক লিওনেল মেসি। বারবার কাছে গিয়েও হচ্ছিলো না অধরা শিরোপার স্বপ্ন পূরণ। অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হলো মেসির। কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার একমাত্র গোলে ২৮ বছর পর শিরোপার স্বাদ পেলো আলবিসেলেস্তেরা।

দারুণ ছন্দে থেকেও বছরখানেক আগে আর্জেন্টিনার স্কোয়াডে জায়গা হচ্ছিলো না ডি মারিয়ার। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ দিয়ে কয়েকমাস আগেই ফেরেন দলে। কোপা আমেরিকায়ও নিয়মিত একাদশে স্থান হচ্ছিলো না পিএসজি তারকার। কলম্বিয়ার বিপক্ষে বাজে ভুলে গোলও করতে ব্যর্থ হন ডি মারিয়া।

তবে ফাইনালে কোচ লিওনেল স্কালোনি ভরসা রাখেন অভিজ্ঞ মারিয়ার উপর। শুরুর একাদশে জায়গা পেয়ে আর্জেন্টাইন কোচের ভরসার মর্যাদা দিতে কার্পণ্য করেননি নাম্বার ইলেভেন। একমাত্র গোলে রবিবারের ম্যাচের নায়ক ডি মারিয়া হলেন ম্যাচসেরা।
গোটা আসরে দারুণছন্দে থাকা লিওনেল মেসি হয়েছেন বেস্ট প্লেয়ার। সঙ্গে টপ স্কোরারের খেতাবটাও আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের ঝুলিতে। তবে সব ছাড়িয়ে শিরোপাটাই মুখ্য মেসির কাছে। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপেরও সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন। তবে সেবার জার্মানির কাছে শিরোপা হারায় বেস্ট হওয়ার আনন্দের ছাপ ছিল না মেসির চেহারায়। এবার দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন পূরণ হলো ৩৪ বছর বয়সী কিংবদন্তি ফুটবলারের।

সেমিফাইনালের নায়ক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ হয়েছেন কোপা আমেরিকার সেরা গোলরক্ষক। কলম্বিয়ার বিপক্ষে শেষ চারের লড়াইয়ে টাইব্রেকারে দারুণ তিনটি সেভ করেন অ্যাস্টন ভিলার গোলরক্ষক। ফাইনালেও দুর্দান্ত একটি সেভ করে জাল অক্ষত রাখেন মার্টিনেজ।

ঐতিহাসিক মারাকানায় ৭১ বছর পর ফাইনালে হারলো ব্রাজিল। ১৯৫০ সালের মারাকানা ট্রাজেডির পর আর একটি ম্যাচেও হারেনি সেলেসাওরা। বিশ্বকাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে প্রায় দুই লাখ দর্শকের সামনে উরুগুয়ের কাছে হারে ফেভারিট ব্রাজিল। কয়েকজন সমর্থক তো হার মানতে না পেরে মারাকানার ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন।

রবিবার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের হারানোর ম্যাচে অন্য এক আর্জেন্টিনাকে দেখা যায়। ট্যাকল, আক্রমণ কিংবা কাউন্টার অ্যাটাক- সব দিক থেকেই অনন্য ছিল আলবিসেলেস্তেরা। তবে গোটা ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে ব্রাজিল। ৬০ শতাংশ বল দখলে রেখে গোলবারের উদ্দেশ্যে ১৩টি শট নেয় যার লক্ষ্যে ছিল ২টি। বিপরীতে ৪০ শতাংশ বল দখলে রেখে ৬টি শটের ২টি লক্ষ্যে রাখে আর্জেন্টিনা।

জমজমাট ফাইনালে দুই দলই শারীরিক ফুটবল খেলেছে। ব্রাজিলের ২২টি ফাউলের বিপরীতে আর্জেন্টিনা করে ১৯টি ফাউল। হলুদ কার্ড আর্জেন্টিনার ৫, ব্রাজিলের ৪।

ম্যাচের ২২ মিনিটে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার নজরকাড়া গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। নিজেদের ডি-বক্স থেকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দূরপাল্লার পাস দেন ডি পল। দারুণ দক্ষতায় বল নামিয়ে ব্রাজিল গোলরক্ষক এদেরসনকে পরাস্ত করেন ডি মারিয়া।

বিরতি থেকে ফিরে আক্রমণে ধার বাড়ায় ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধে আট মিনিটের মাথায় গোলও পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। তবে ৫৩তম মিনিটে রিচার্লিশনের করা গোলটি অফসাইডে বাতিল হয়।

৮৭তম মিনিটে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ দারুণ সেভে দলকে রক্ষা করেন। এসময় বদলি হিসেবে নামা গাবির শট দুর্দান্ত পাঞ্চে ঠেকিয়ে দেন অ্যাস্টন ভিলার আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক।

শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই আনন্দে কেঁদে ফেলেন লিওনেল মেসি। প্রিয় অধিনায়ককে ঘিরে আলবিসেলেস্তেদের উল্লাস শুরু হয়।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.