হার্ড ইমিউনিটির প্রস্তাব বাতিল সিঙ্গাপুরে

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল হিসেবে হার্ড ইমিউনিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে এশিয়ার বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত সিঙ্গাপুর। এ কৌশলের পরিবর্তে ভ্যাকসিন প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত দেশটি সংক্রমণ রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা চালিয়ে যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।

একটি জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ (ন্যূনতম ৬০ শতাংশ) লোককে ভাইরাসে আক্রান্ত হতে দিয়ে সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে আক্রান্তদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউনিটি) তৈরির প্রক্রিয়াই হলো হার্ড ইমিউনিটি। তবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যথেষ্ট সবল না হলে এতে প্রথম ধাক্কায় প্রচুর মানুষের প্রাণ যেতে পারে।

ব্রিটেনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে হার্ড ইমিউনিটির কথা বলে সমালোচিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। পরে তিনি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হন। ওই এতো বেশি আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার মতো স্বাস্থ্য অবকাঠামো ব্রিটেনের নেই বলে সতর্ক করেন বিশেষজ্ঞরা। শেষ পযন্ত এ চিন্তা বাদ দেয় সরকার।

এদিকে সিঙ্গাপুরও প্রথম দিকে সংক্রমণ বেশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। কিন্তু মাসখানেক ধরে অস্বাভাবিক বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকদের ডরমেটরিগুলোতে প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এ পরিস্থিতিতেই উঠে এসেছে হার্ড ইমিউনিটির কথা।

গতকাল মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা পরিচালক কেনেথ ম্যাক বলেন, হার্ড ইমিউনিটি কৌশল আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হবে। আক্রান্ত অনেক বেড়ে যাওয়ার কথা মাথায় রেখে এবং সক্ষমতা বাড়াতে যদিও আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি, এখন হার্ড ইমিউনিটি কৌশলের দিকে এগোলে পরিস্থিতি সহজেই নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে।

দেশটিতে বর্তমানে প্রতিদিন শতাধিক কভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হওয়ায় আরো ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষা কৌশল বেছে নিচ্ছে সরকার। সরকার এরই মধ্যে পরীক্ষার সক্ষমতা পাঁচগুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে, যা এ বছরের শেষ দিকে একদিনে প্রায় ৮ হাজার থেকে ৪০ হাজারে উন্নীত হবে। চলমান আংশিক লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙা করতে কিছু পরীক্ষামূলক পরিকল্পনা নিয়েও এগোচ্ছে দেশটি।

এদিকে গতকাল থেকে হেয়ার সেলুন, স্বয়ংক্রিয় লন্ড্রি, পোষাপ্রাণির খাবারের দোকানসহ কয়েকটি কর্মক্ষেত্র ও পরিষেবা চালু হয়েছে। এছাড়া আগামী সপ্তাহ থেকে নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষার্থীদের পুনরায় বিদ্যালয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

এপ্রিলের শুর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্র বন্ধের পর দেশটিতে ৮০ শতাংশের বেশি কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করছেন।

মঙ্গলবার ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কমিউনিকেবল ডিজিসের পরিচালক ভার্নন লি বলেন, ব্যাপক সংক্রমণের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা খুব কঠিন এবং এর ফলে প্রচুর সংখ্যক মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ও জটিলতা দেখা দেবে। তাই আমাদের কার্যকর একটা ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

যদিও দেশটিতে কভিড-১৯ সংক্রমণের দ্রুত বিস্তার ঘটছে। কম বেতনভুক্ত অভিবাসী শ্রমিকদের গাদাগাদি করে বসবাস করা ডরমেটরিতে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের কারণে সিঙ্গাপুর এশিয়ায় করোনাভাইরাসের অন্যতম উপকেন্দ্র হিসেবে রেকর্ড করেছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৮৮৪ জন নতুন শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে দেশটিতে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ হাজারেরও বেশি, যাদের মধ্যে বড় অংশই ডরমেটরির।

তবে ডরমেটরিতে সংক্রমণের হার স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সিত উয়েই লিম। তিনি বলেন, ভাইরাসটি থেকে সেরে ওঠা শ্রমিকদের জন্য সরকার ‘ক্লিন ব্লক’ তৈরি করছে, ধীরে ধীরে কর্মস্থল খোলার পর তারা আবার কাজে যেতে পারবে।

এদিকে উন্নয়নমন্ত্রী লরেন্স ওয়াং বলেন, মে মাসের মধ্যে ২০ হাজার বিদেশী শ্রমিক কেয়ার সেন্টার থেকে ছাড়া পেয়ে কাজের জন্য প্রস্তুত হবে। এছাড়া নগরীর ৩ লাখের বেশি বিদেশী কর্মীকে কভিড-১৯ পরীক্ষা করা হবে। ঘন জনগোষ্ঠী ও ডরমেটরিতে কভিড-১৯ পরিস্থিতি অগ্রগতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার বিধিনিষেধ তুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। পাশাপাশি বিদেশী শ্রমিক কাজের ফেরানোর দিকেই বেশি নজর দিচ্ছে নগর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.