স্থগিত হলো একুশে বইমেলা

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার স্থগিত হচ্ছে বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী ঐতিহ্যবাহী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাঙালির প্রাণের এই বইমেলা স্থগিত হলেও ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে। করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার আয়োজন করা হবে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে বইমেলা স্থগিত করার প্রস্তাব করেছে বাংলা একাডেমি। এসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির পরিষদ সভায় বইমেলা স্থগিত করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় যদি অনুমোদন দেয় তাহলে সেটা কার্যকর হবে। বইমেলা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আগামী রবিবারকিংবা সোমবার জানানো সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ কালের বলেন, ‘বাংলা একাডেমি একটি প্রস্তাব দিয়েছে বলে জেনেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো পাইনি। শীতের আগমনের সঙ্গে যেভাবে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে তাতে আমরা ফেব্রুয়ারির মেলা স্থগিত করার চিন্তা করছি।’ তবে বাতিল করা হচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আগামী মার্চ-এপ্রিলের দিকে করোনা পরিস্থিতির উত্তরণ হলে আমরা বইমেলা করব। তবে ফেব্রুয়ারির মেলা যেহেতু আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে তাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই ধারা রক্ষার চেষ্টা করা হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলা একাডেমির পরিষদসভায় বইমেলা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হলেও বইমেলাকে কেন্দ্র করে মাসব্যাপী যেসব অনুষ্ঠান হয়ে থাকে তা অব্যাহত রাখা হবে। এ জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করে ভার্চুয়ালি বইমেলা ও মাসব্যাপী অনুষ্ঠান করা হবে। এ জন্য বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বইমেলার পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ এসব নিশ্চিত করেন।

একুশের বইমেলার মঞ্চ থেকে নিয়মিত যেসব অনুষ্ঠান হয়ে থাকে তার মধ্যে রয়েছে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান, একুশের স্মারক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর বাইরে এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান রয়েছে। এসবই ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, দেশ-বিদেশের দর্শক-শ্রোতারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনে এবং টেলিভিশনের পর্দায় তা উপভোগ করার সুযোগ পাবে।

তিনি আরো বলেন, বইমেলাও ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর যেসব প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছিল, সেসব প্রতিষ্ঠানের বইয়ের তালিকা বইমেলার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। নতুন আসা বইয়ের তথ্যও প্রচার করা হবে। এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে পাঠক বই কেনার অর্ডার দিতে পারবেন। প্রতিদিন কী পরিমাণ বই বিক্রি হলো, সে তথ্যও দেওয়া যাবে।

জালাল আহমেদ বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলার একটি অভ্যাস আমাদের গড়ে উঠেছে। সে অভ্যাসটা যাতে ধাক্কা না খায়, তার জন্য সেটা ভার্চুয়ালি অব্যাহত রাখার চিন্তা আমরা করছি। আমরা যেভাবে চিন্তা করছি তা সফল হলে বইমেলার প্রচলিত ধারণাই পাল্টে যাবে।’

ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত এই বইমেলা ১৯৭৪ সাল থেকে চালু হয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সময়ের এই বইমেলা এবারই প্রথম নির্ধারিত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.