শিশুর ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ঘাটতি হলে করণীয়

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেহে এদের একটার ঘাটতি দেখা দিলে নানাবিধ উপসর্গ নিয়ে শিশুর শরীরে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সজনিত ঘাটতি প্রকাশ পায়। এই সম্পর্কে জানাচ্ছেন প্রফেসর ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স জলে দ্রবণীয় কতগুলো অণুপুষ্টির সমাহার—যাতে আছে থাইয়ামিন (ভিটামিন বি-১), রাইবোপ্লেবিন (ভিটামিন বি-২ ), নিয়াসিন (ভিটামিন বি-৩), পাইরোডক্সিন (ভিটামিন বি-৬), ফলেইট, কোবালেমিন (ভিটামিন বি-১২), বয়োটিন, পেনটোথেনিক এসিড প্রভৃতি খাদ্যপ্রাণ। খোলাইন এবং ইনোসিটোল-ও এই গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত।

– থাইয়ামিন (ভিটামিন বি-১)— এই ভিটামিন মূলত শর্করা খাবার বিপাকে, নিউক্লিয়িক এসিড তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এই ভিটামিনের অভাবজনিত কারণে শিশুর মধ্যে খিটখিটে ভাব, স্নায়ুর অবশভাব, মাংসপেশির ব্যথা, স্থিররেখা ধরে হাঁটতে না পারা (ড্রাই বেরি বেরি) এবং দ্রুত হৃত্স্পন্দন, মুখ-হাত পা ফোলা, হার্ট ফেলিওর (ওয়েট বেরি বেরি) প্রভৃতি রোগের লক্ষণ দেখা যায়।

মাংস, মাছ, মিলের অছাঁটা চাল, এই ভিটামিনের সহজ উৎস।
– রাইবোপ্লেবিন (ভিটামিন বি-২)—জিহ্বা টকটকে লাল, ঠোঁটের কোনায় ঘা, চোখ কচলানো-চোখ থেকে জল ঝরা, শিশুর বাড়নের সমস্যা—এই সব হলো এই ভিটামিনের অভাবজনিত চিহ্ন। মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা শিশু এই ভিটামিনের অভাবে পড়ে বেশি। দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, সবুজ শাক-সবজিতে এই ভিটামিন প্রচুর মেলে।

– নিয়াসিন (ভিটামিন বি-৩)—এই ভিটামিনের অভাবজনিত অসুখের নাম পেলেগ্রা, যা ডায়রিয়া, রোদের সংস্পর্শে আসা শরীরে দুই দিকের ত্বকের প্রদাহ এবং মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর নানা জটিলতা, অচৈতন্য অবস্থা নিয়ে প্রকাশ পায়। মাংস, মাছ, পোলট্রিজাত খাবার, সবুজ শাক-সবজি এই ভিটামিনের প্রধান উৎস।

– পাইরোডক্সিন (ভিটামিন বি-৬)—এই ভিটামিনের অভাবে শিশু খিটখিটে মেজাজ, খিঁচুনি, অ্যানিমিয়া, কম বাড়ন প্রভৃতি উপসর্গ নিয়ে হাজির হয়। মাংস, মাছ, পোলট্রিজাত খাবার, লিভার, কলা, বাত, আলু এই ভিটামিনের উৎস বলে বিবেচিত।

– ফলেইট—শিম, পাতাযুক্ত শাক-সবজি, লেবু ও অন্যান্য সাইট্রাস ফল, পেঁপে এই ভিটামিনের সহজ উৎস। এর অভাবে শিশুর বাড়ন রোধ হয়ে যেতে পারে।

– কোবালেমিন (ভিটামিন বি-১২)—এই ভিটামিনের অভাবে পড়ে শিশু মেগালোব্লাসটিক অ্যানিমিয়া, বিকাশে বাধাগ্রস্ত হওয়ার মতো কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়। সম্পূর্ণ নিরামিষভোজীরা এই ভিটামিনের অভাবে পড়ে বেশি। মাংস, সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম, পোলট্রিজাত খাবার এই ভিটামিনের প্রধান উৎস।

শিশু যাতে এই ধরনের ঘাটতিজনিত অসুখের শিকার না হয় সেজন্য—

– গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের বিধিমতো প্রতিদিন স্বাভাবিক পারিবারিক সুষম খাবার গ্রহণ

– শিশুকে পূর্ণ ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ পান করানো

– শিশুর ছয় মাসের বয়সের পরে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে ঘরে তৈরি পরিপূরক খাবার যেমন : খিচুড়ি খাওয়ানো শুরু করা। পরিপূরক খাবার যেন সুষম হয়।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.