রাজধানীর ২১% বাড়িতে এডিসের লার্ভা

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটির ২১ শতাংশ বাড়িতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া যায় বহুতল ভবনে, ৪৪ শতাংশ। ২৪ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে দুই থেকে তিনতলা (একক বাড়ি) বাড়িতে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার বর্ষা মৌসুম জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকার দুই সিটির তিন হাজার ১৫০টি বাড়ি পরিদর্শন করেন জরিপকারীরা। অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জরিপে ঢাকা দক্ষিণের ১৯ শতাংশ ও উত্তরের ২৪ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। দুই সিটিতেই এডিসের লার্ভার গড় ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ২৫ শতাংশের বেশি।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের\ অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, যখন ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি হয়, তখন ধরে নেওয়া হয় এখানে এডিস মশাবাহিত রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

জরিপ অনুযায়ী বলা যায়, ঢাকার দুই সিটির মানুষই এখন ঝুঁকিতে।

তিনি বলেন, কোনো বাড়িতে যখন একাধিক ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় এবং যদি পাঁচ বছরের নিচে কোনো শিশু থাকে, তাহলে নিশ্চিত ধরে নেওয়া যায় সেই বাড়িতে নিয়মিতভাবে এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে। মশাগুলো একজন থেকে আরেকজনকে কামড়ে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ জন্য মশা যাতে জন্মাতে না পারে, সেই কাজটি আগে করতে হবে।

দক্ষিণের ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব বেশি

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫৯টি ওয়ার্ডের এক হাজার ৮১৫টি বাড়ি জরিপ করে ৩৪৩টি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮৮ শতাংশ এডিস এজিপটি মশার লার্ভা। ৪৯.৯২ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে বহুতল ভবনে। ব্রুটো ইনডেক্স ২৫.২৯ শতাংশ। লার্ভার গড় ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে।

এখানে ব্রুটো ইনডেক্স ৭৩ শতাংশ। এরপর ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ৭০ শতাংশ।

উত্তরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব বেশি
ঢাকা উত্তর সিটির ৪০ ওয়ার্ডের এক হাজার ৩৩৫টি বাড়িতে জরিপ করে ৩১৪টি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ এডিস এজিপটি মশার লার্ভা। এই সিটির ৪৮.৬১ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে বহুতল ভবনে। লার্ভার গড় ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ২৮.৯১ শতাংশ। লার্ভার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে ব্রুটো ইনডেক্স ৬০ শতাংশ। এরপর ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ৪৮.৮৯ শতাংশ।

১০ হাজার ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে

দেশে গত এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরো ১১ জন মারা গেছে। একই সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ৯৫৬ জন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির এমন তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত এক দিনে মারা ব্যক্তিদের আটজন ঢাকার বাইরে ও চারজন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেছে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে দুই হাজার ৪৫ জন ঢাকার বাইরে এবং ৯১১ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

নতুন রোগীদের নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১০ হাজার ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে চার হাজার ২২২ জন ঢাকা মহানগরে ও পাঁচ হাজার ৭৯৩ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ নিয়ে চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ২২৮ জন। মারা গেছে ৭৫২ জন।

সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ রোগতত্ত্ব ও গবেষণা কেন্দ্র আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক আহমেদ বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ এখন পুরোপুরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে। এখন আর আশা করার কিছু নেই যে এডিস মশা কমে যাবে। এখন আমাদের ভাবতে হবে কিভাবে মৃত্যু কমানো যায়।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা ডেঙ্গু রোগী কমাতে পারছি না। কিন্তু মৃত্যুটা কমাতে পারি। যদি আমরা সব রোগীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসি, তাহলে গুরুতর রোগীর সংখ্যা কমে যাবে। এতে মৃত্যুও কম হবে।’

মশা নিধন না হলে সংকট কাটবে না

হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসাব্যবস্থায় কোনো ঘাটতি নেই, তবে এডিস মশা নিধনে স্থায়ী কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সংকট কাটবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগী কমানোটা হলো সবচেয়ে বড় বিষয়। রোগী কমাতে হলে আগে মশা কমাতে হবে। কাজেই মশা কমানোর যাদের দায়িত্ব তাদের এ দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করা প্রয়োজন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.