যেভাবে ক্যারিয়ার বাছাই করবেন

আমরা সবাই ভালো ক্যারিয়ার চাই। স্কুল জীবন থেকে মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, শিক্ষক আর পরিচিত মানুষদের উপদেশ দিয়ে আমাদের ক্যারিয়ার ভাবনা প্রভাবিত হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে আমরা ভুল সিদ্ধান্ত নিই। হয়তো যে ছেলে মার্কেটিংয়ে ভালো করতে পারতো, সে পরিবারের চাপে পড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে বাধ্য হয়। যে মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে সাফল্য পেতো, সে মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ডাক্তার হয়। ভারসাম্য রেখে নিজেদের জন্য ক্যারিয়ার বাছাই করা অনেকের ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কীভাবে এ ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করা যায়, সে বিষয়ে আজ জেনে নিই।

নিজের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানুন

নিজেকে মূল্যায়ন করতে শিখুন। কোন কাজের জন্য আপনার মনোবল কতটুকু কিংবা আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে কেমন কাজ ভালো যায়, সে সম্পর্কে ধারণা রাখুন। যেমন, আপনি যদি কম কথা বলতে পছন্দ করেন কিংবা মানুষের সাথে যোগাযোগ কম রাখতে চান, তাহলে পাবলিক রিলেশনস অফিসারের কাজ আপনার জন্য যথোপযুক্ত হবে না।

নিজের আগ্রহ, উদ্দীপনা ও ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিন

যে কাজে আপনার মনের আনন্দ লুকিয়ে আছে, যে কাজ করতে আপনি উত্সাহ পান, সে কাজকে নিজের ক্যারিয়ার বানানোর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই। শুধুমাত্র জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করে খুব কম ব্যক্তিই বড় মাপের সফলতা পেয়েছেন। ধরুন, সঙ্গীতের প্রতি আপনার অনেক আগ্রহ। আপনি যদি গান গাইতে না পারেন কিংবা কোন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে না পারেন, সেক্ষেত্রে হাল ছেড়ে দেবার কিছু নেই। হয়তো সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের পেশা আপনার জন্য ভালো হতে পারে।

নিজের দক্ষতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ান

আপনার হয়তো অনেক কিছু ভালো লাগে। কিন্তু এর মধ্যে কোন কাজের জন্য আপনি দক্ষ-সেটা নিয়ে ভাবুন। এমন কোন গুণ আপনার থাকতে পারে যা কোন কাজের সাথে মানানসই। যেমন, স্কুল-কলেজে হয়তো জীববিজ্ঞান নিয়ে আপনি আগ্রহী ছিলেন। ভালোও করতেন এ বিষয়ে। সেক্ষেত্রে আপনি ডাক্তার, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, জিন প্রকৌশলী কিংবা বায়োকেমিস্ট হবার দিকে ঝুঁকতে পারেন।

পছন্দের কাজের পরিবেশ সম্পর্কে জানুন

আপনি কেমন পরিবেশে কাজ করতে চান, তা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ক্যারিয়ার বাছাই করার আগে নিজের পছন্দের কাজের পরিবেশ নিয়ে ভাবুন। যেমন, কারখানার পরিবেশে বা ভারি যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করলে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভালো করার সম্ভাবনা কম।

কাজের সুযোগ বিশ্লেষণ করুন

আমরা বোধহয় যে ভুলটা সবচেয়ে বেশি করি, সেটা হলো, কাজের সুযোগ সম্পর্কে খোঁজ না নেয়া। আপনি যে কাজ করতে চান, সে কাজের ভবিষ্যত্ চাহিদা আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করুন।

আমাদের দেশে যে পরিমাণ বিবিএর শিক্ষার্থী রয়েছে, বাস্তবে এর চাহিদা তার চেয়ে কম। অন্যদিকে দক্ষ লোক না থাকায় দেশের ঔষধ কোম্পানিগুলো বিদেশ থেকে মাইক্রোবায়োলজিস্ট এনে চাহিদা মিটাচ্ছে।

আপনি কেমন লাইফস্টাইল চান, তা নির্ধারণ করুন

আমাদের লাইফস্টাইলের উপর কাজের প্রভাব রয়েছে। তাই আপনি শুধু শহর অঞ্চলে থাকতে অভ্যস্ত নাকি গ্রামে কাজ করতেও স্বচ্ছন্দ, তা ক্যারিয়ার বাছাইয়ের সময় মাথায় রাখবেন। আর্থিক সঙ্গতির ব্যাপারেও খেয়াল রাখুন।

আপনার স্বপ্নের ক্যারিয়ারের বাস্তবতা বুঝে কাজ করুন

আপনি যে ক্যারিয়ারের স্বপ্নই দেখুন না কেন, শুরুতে বাস্তববাদী হওয়া প্রয়োজন। আপনি যদি এমন কোন পেশায় যেতে চান যার জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চতর শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ দেশে নেই, তবে তা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। আবার আর্থিক অবস্থা ভালো না হলে বিদেশে শিক্ষা বৃত্তির জন্য আগে থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করে তুলুন।

ব্যক্তিত্বের পরীক্ষা নিন ও ক্যারিয়ার পরামর্শদাতার সাথে আলোচনা করুন

নিজ থেকে উপযুক্ত ক্যারিয়ার বাছাই করতে না পারলে অনলাইনে ক্যারিয়ার টেস্টগুলোতে অংশ নিন। এ সকল টেস্ট আপনার ব্যক্তিত্ব, দক্ষতা, মনোভাব কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে যাচাই করে উপযুক্ত কিছু কাজের তালিকা দেবে। তালিকার পেশাগুলো নিয়ে যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারেন। অথবা আপনি চাইলে পেশাদার ক্যারিয়ার কনসালট্যান্টের শরণাপন্ন হতে পারেন।

নির্বাচিত ক্যারিয়ার নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করুন

ধরুন, আপনি কোন একটি পেশাকে নিজের জন্য উপযুক্ত ধরে নিলেন। এ পেশায় আজ থেকে ৪/৫ বছর পর আপনি নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান? এ পেশা নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী? এ ব্যাপারগুলো সম্পর্কে একবার ভাবুন। আপনার স্বপ্নপূরণ আর বাস্তবতার মাঝে বাধাগুলো দূর করার জন্য কী কী করতে হবে, তা ঠিক করুন।

মনোবল আর আত্মবিশ্বাস রাখুন

আপনি যে ক্যারিয়ারই বাছাই করুন না কেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। অনেক সময় আমরা এমন অনেক পেশায় ঝুঁকে পড়ি, যেগুলোতে আমাদের আগ্রহ ও ভালোলাগা থাকলেও পরিবারের সমর্থন থাকে না কিংবা আমাদের সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণার সাথে খাপ খায় না। আপনি যদি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হন, তাহলে দৃঢ় মনোবল নিয়ে সে ক্যারিয়ারে সাফল্য নিশ্চিত করতে পারেন।

পরিশ্রম করুন। সৃজনশীল হবার চেষ্টা করুন। চেষ্টা করুন নতুন কিছু সৃষ্টি করার। তাহলেই দেখবেন যে চিন্তাভাবনা করে যে ক্যারিয়ারটি বাছাই করেছিলেন, সে ক্যারিয়ারই আপনার জন্য সুন্দর একটি জীবন নিশ্চিত করছে। শুভ কামনা থাকলো আপনার জন্য!

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.