‘প্রধানমন্ত্রী কলমের খোঁচায় দুষ্টদের ওড়ানো ফানুস চুপসে দিয়েছেন’

খবরটা আমি জানতে পারি, দুপুর বারোটার দিকে। একটা মিটিংয়ে যোগ দিতে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে বিজয় সরণিতে জ্যামে আটকা পড়ে তখন।

সেই প্রথম শুনলাম তা নয়। তার কদিন আগে কাছের একজন আচমকা ফোন করে খুবই উত্তেজনা আনন্দে বলেছিল, আপনাকে বোধহয় এ বছর একুশে পদক দেয়া হচ্ছে।

সে খবরে অপ্রস্তুত বোধ হয়। বিশ্বাস অবিশ্বাস কোনটাই করিনি। যে ফোন করেছিল তাকে বলি- ঠিক বেঠিক যাই হোক, এ শোনা কথা আর কাউকেও বলবার দরকার নেই।

কথাটা কানে এসেছিল, কানেই থেকে যায়।

মনে ঢুকতে দেইনি। মনাকেও বলিনি- আজ একজন ফোন করে এমন কথা বলেছে। শোনা কথা আমলে নেবার যুক্তি তো নেই।

বহুদিন ধরে মানুষ বলাবলি করে- এই সব প্রাপ্তির জন্য ভারী পরিচয়ের ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ, ঘনিষ্ঠতা এবং তদবির টদবিরও করা লাগে। সে বিচারে এ অধম অতি অযোগ্য। যোগ্য হয়ে ওঠার চেষ্টা যার মোটেও নেই, এমন সংবাদ শুনে তার চুপ হয়ে যাওয়ার কথা।

যাই হোক, সেদিন জ্যামের মধ্যে বসে বারবার ঘড়ি দেখছি আর সময়মতো মিটিংটাতে পৌঁছাতে পারবো কি পারবো না- সে অংক কষে ছটফট করছি। এরকম সময় ফোনটা আসে, আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।

জ্যাম ছুটে গেলো। গাড়ি ছুটছে। মনাকে খবরটা জানাতে ফোন করি। পাই না তাকে। পেলাম যখন নিজে খবরটা বলবার আগে তারই অভিনন্দন পাই। এরপর আসতে শুরু করলো ফোনের পর ফোন। ফোনে শুরু হয়ে গেলো অভিনন্দনবৃষ্টি।

সবচেয়ে উল্লেখ করার মতো প্রতিক্রিয়া আমার ছোটবোনটার। ফোনে তার খুশী- হাসির ধরণে টের পাই। ভাইয়ের রকম সম্পর্কে ভালো করেই জানে, তাই সে বিস্মিত – কিভাবে হলো?

সাধারণ ও অসাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ায় মনে হয়েছে, মানুষ, পৃথিবী ও জীবন সত্যিই খুব সুন্দর। মনে হয়েছে, সকলের উচ্ছাস, আনন্দ, উষ্ণতা, ভালোবাসার এমন আন্তরিক প্রকাশ জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাপ্তি।

নানা অনুভবের মধ্যে একটা বিশেষ প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করি। কোনও কালেই রাজনীতির সাথে কোনরকম সম্পৃক্ততা বা যুক্ত হওয়ার আগ্রহ ছিল না আমার। আমার বিশ্বাস, সবাইকেই রাজনীতির মানুষ হতে হয় না। মানুষের কল্যান, দেশকে ভালোবেসে কর্তব্য পালন রাজনীতি না করেও নিজ নিজ যোগ্যতা, সামর্থ অনুযায়ী করা সম্ভব।

রাজনীতির সঙ্গে ছোঁয়াছুয়ি নেই বলেই একশ্রেণীর মানুষকে কপালে ভাঁজ ফেলা আচরণ করতে দেখেছি। পেশার ক্ষেত্রে একের পর এক যোগ হয়েছে হতাশ হওয়ার মতো ঘটনা। বিভিন্ন উপলক্ষ্যে ইনিয়ে বিনিয়ে বোঝানো হয়েছে, আমি উপর মহলে অপ্রিয়-দোষী, মন্দ, বিরোধী পক্ষ।

এসব কথা হতাশ করে। আহত হয়েছি, কষ্ট পেয়েছি অনেক সময়- আবার হেসেছিও। মনে বিশ্বাস ছিল, সত্য নয়- বানানো কথা। কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় আবোল তাবোল কথা ছড়িয়ে মনে মনে সুখ অনুভব করে- এমনটা ভেবে স্বস্তি খুঁজেছি, মিলেছে কিন্ত অপর পিঠে তীব্র যাতনাও ছিল।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অশেষ ধন্যবাদ, কলমের খোঁচায় তিনি দুষ্টদের ওড়ানো ফানুস চুপসে দিয়েছেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.