‘বাবা বদলে দিয়েছে পৃথিবী’

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যার উপযুক্ত বিচার চাইলেন তার স্ত্রী রক্সি ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার মিনিয়াপোলিসের সিটি হলে আয়োজিত ফ্লয়েডের স্মরণসভা ও সংবাদ সম্মেলনে কান্নারত কণ্ঠে রক্সি বলেন, ‘জর্জ ফ্লয়েড একজন ভালো মানুষ ছিলেন। এ হত্যার বিচার চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে তখন উপচেপড়া ভিড়। মায়ের ঠিক পাশেই সাদা টপ পরা জর্জের ছয় বছরের মেয়ে জিয়ানা। সংবাদ সম্মেলনে কোনো কথা না বললেও বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জিয়ানা বলে, ‘আমার বাবা পৃথিবী বদলে দিয়েছে।’

২৫ মে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর মিনিয়াপলিসে হত্যার শিকার হন জর্জ ফ্লয়েড। কৃষ্ণাঙ্গদের দাবি, বর্ণবিদ্বেষের বলি হয়েছেন ফ্লয়েড। হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ঝড়।

হত্যাকাণ্ডের আটদিনের মাথায় মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে কাঁদতে কাঁদতে আবেগঘন বক্তব্য দেন ৩৮ বছর বয়সী রক্সি । তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানের জন্য আমি এখানে এসেছি। জর্জের জন্য আমি এখানে এসেছি। কারণ, আমি তার জন্য ন্যায়বিচার চাই। আমি ন্যায়বিচার চাই। কারণ, তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। কে কি ভাবলো তাতে কিছু যায় আসে না, তিনি ভালো মানুষ ছিলেন এটাই সত্যি।’

মেয়ের দিকে তাকিয়ে রক্সি ভাঙা গলায় বলেন, তার মেয়ের জীবনের সবচেয়ে দামী জিনিসটা ছিনিয়ে নিয়েছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এর সুবিচার করতেই হবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘দিনশেষে সবাই তো বাড়ি ফেরে, পরিবারের কাছে ফেরে। কিন্তু জিয়ানা তো আর তার বাবাকে কাছে পাবে না। বাবাকে ছাড়াই ওকে বেড়ে উঠতে হবে, গ্রাজুয়েট হতে হবে। সে এ জীবনে আর বাবা পাবে না !’

শুধু নৃশংস হত্যার ঘটনা নয়, একজন ভালো বাবা ও ভালো মানুষ হিসেবে জর্জ ফ্লয়েডকে স্মরণ করার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

ছোট্ট জিয়ানা পুরোটা সময় চুপচাপ থাকে। সে এখনও ঠিকমতো বুঝতেও পারছে না আদতে কী ভয়ানক ঘটনা ঘটে গেছে তার জীবনে। বাবা আর ফিরে আসবে না, এটুকুই হয়তো বুঝেছে এই কয়েক দিনে। হল থেকে সে বেরিয়ে আসে বাবার বন্ধু সাবেক বাস্কেটবল তারকা স্টিফেন জ্যাকসন সিনিয়রের হাত ধরে। এ সময় এক সাংবাদিক তার ছবি তুলতে তুলতে জানতে চান, ‘টেলিভিশনে তো তোমার বাবার নাম বলছে বারবার। তোমার বাবা কী করেছিল, তুমি জানো?’ জিয়ানার উত্তর ছিল, ‘আমার বাবা পৃথিবী বদলে দিয়েছে।’

ফ্লয়েডের পারিবারিক আইনজীবী ক্রিস স্টুয়ার্ট বলেন, ‘সন্তানের কাছ থেকে বাবাকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা প্রিয়জন হারিয়েছেন। এই হত্যার বিরুদ্ধে এত মানুষ জেগে উঠেছে। দেশে একটা বড় পরিবর্তন দেখলাম আমরা।’

একদিকে প্রতিবাদের আগুন, অন্যদিকে প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যখন প্রতিবাদী ঝড়, অন্যদিকে ৩৮ স্ট্রিট অ্যান্ড শিকাগো অ্যাভিনিউ ভরে রয়েছে মোমবাতির নরম আলোয়। ফ্লয়েডের স্মরণে বহু মানুষের দেওয়া ফুল, কার্ড উপচে পড়ছে সেখানে। শত শত মানুষের ভেজা চোখের প্রার্থনা গুনগুন করছে শ্রদ্ধায়। সূত্র: সিএনএন

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.