চীনের বিরুদ্ধে ইইউকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান

চীনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক নেতা স্যার আয়েন ডানকান স্মিথ।

ডানকান স্মিথ সোমবার যুক্তরাজ্য থেকে ইইউ টুডে আয়োজিত একটি জুম সম্মেলনে অংশ নিয়ে এ আহ্বান জানান। খবর ইইউ পলিটিক্যাল রিপোর্টের

এই বছরের শুরুর দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নতুন আইন পাস করে। এই আইনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের উপর নিষেধাজ্ঞাসহ শাস্তির বিধান রয়েছে।

এই আইন পাসের পরেই ডানকান স্মিথ তার আহ্বান জানিয়েছেন। এই ধরনের আইন ‘ম্যাগনেটস্কি অ্যাক্ট’ নামেও পরিচিত। এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় চালু ছিল।

নাভালনির বিষক্রিয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার রাশিয়ান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

ডানকান স্মিথ সম্মেলনে বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত কোনো বাণিজ্যিক চুক্তি যাতে ভবিষ্যতে না হয় সে বিষয়টি হাউস অফ কমন্সে আমরা তুলে ধরছি এবং এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের অবস্থান পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, চীন মুক্ত বিশ্ব বাণিজ্যে বিশ্বাসী। উৎপাদন খরচ কমাতে অনেক ব্যবসায়ী চীনে ছুটে গেছে। কিন্তু এটি করতে গিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব এই ধরনের বাণিজ্যের অসুবিধার কথা একদম ভুলে গেছে। কারণ এই ধরনের বাণিজ্য চুক্তিতে কোনো ভারসাম্য নেই।

তিনি বলেন, মুক্ত বিশ্বের বেশিরভাগ অংশকে তাদের উপর নির্ভরশীল হতে চীন কৌশলগতভাবে এবং খুব চালাকির সঙ্গে কাজ করেছে। তবে আমরা খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে চীনের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন দেখতে পাই। শ্রমশিবিরে তারা জোরপূর্বক পাঁচ লক্ষ তিব্বতিকে আটকে রেখেছে। সম্প্রতি উইঘুরদের ওপর চীন অত্যাচার করে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তা গণহত্যার শামিল।

তিনি বলেন, উইঘুররা তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে শিবিরে বন্দি রাখা হয়েছে এবং তাদের দিয়ে জোর করে কাজ করানো হচ্ছে। তবে দুঃখের বিষয়, পশ্চিমা বিশ্ব এই শ্রমশিবিরের পণ্য এখনও ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, আমরা কেউই এই সমস্যাগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি না। কিন্তু আবার আমরা কেউই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না।

তিনি বলেন, ইইউ এখন চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক চুক্তি করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা তাড়াতাড়ি করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। তাদের প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল কারণ এই বাণিজ্য চুক্তিগুলির জন্য যথেষ্ট ব্যয়ও রয়েছে।

২০২০ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র উইঘুরদের ওপর নির্যাতনের জন্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বেশ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।

ফিনল্যান্ডের গ্রিন লিগের নেতা আলভিয়েন আলামেতসা বলেন, আমরা চীন নিয়ে আর বেশিক্ষণ চুপ করে থাকতে পারি না। এটাকে শেষ করার জন্য ইইউকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত।

বেলজিয়ামের উইঘুর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি একবার টুরসন বলেন, ইইউ নেতাদের অবশ্যই চীনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

তিনি বলেন, উইঘুর অঞ্চলটি প্রথম ১৯৪৯ সালে দখল করা হয়েছিল এবং সবচেয়ে সহিংসতা শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে। চীন সরকার দাদের বিভিন্ন শিবিরে আটকে রেখে নির্যাতন করছে।

পশ্চিমের প্রদেশ জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে রয়েছে চীন। জিনজিয়াংয়ের আটক কেন্দ্রে ‘সংশোধনের নামে আটক রাখা হয়েছে হাজার হাজার উইঘুর, কাজাখ, তুর্কি ও অন্যান্য নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর মুসলিমকে।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, প্রদেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে এবং গণহত্যার মত অপরাধ সেখানে সংঘটিত হচ্ছে।

তারা বলছেন, ‘শিক্ষা শিবির’ নামক ক্যাম্পে উইঘুরদের আটকে রেখে তাদের চীনা ম্যান্ডারিন ভাষা শেখানো হচ্ছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রশংসার কথা বলা এবং তাদের সঠিক আচরণ পরিচালনার নিয়মগুলো কঠোরভাবে মনে রাখতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদের নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সমালোচনা করতে অথবা সেই ধর্ম পরিত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ অভ্যাসগুলোর অংশ হিসেবে চীন সরকার সাংঘর্ষিকভাবে জিনজিয়াংয়ের উইঘুর সংস্কৃতি ও জাতিগত সত্তাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে।

তবে চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, ‘সন্ত্রাসবাদের’ বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সংখ্যালঘুদের ক্যাম্পে রেখে ‘বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ’ দেওয়া হচ্ছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.