গোয়েন্দাদের হাতে মডেল পিয়াসার ভিডিও, ব্যাপক চাঞ্চল্যকর তথ্য!

রাজধানীর পৃথক দুটি বাসায় গত রোববার দিবাগত রাতে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন দুই মডেল।বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় আলোচিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। আর অপরজন হলেন মরিয়ম আক্তার মৌ ওরফে মৌ আক্তার।গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, এই দুই মডেল একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা বাসায় ডেকে নিয়ে উচ্চবিত্ত ও দেশের অনেক প্রভাবশালীদের ব্ল্যাকমেইলিং করতেন।

পিয়াসা গ্রেফতার হওয়ার পর ব্যাপক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।স্বর্ণ-হিরা চোরাচালান থেকে শুরু করে সব ধরনের মাদক কারবারসহ নানান অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এই বিতর্কিত মডেলের।

পিয়াসাকে বারিধারার যে বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটি অনেক বিলাসবহুল।সেটির মাসিক ভাড়া ২ লাখ টাকা।কিন্তু তার নেই কোনো বৈধ আয়ের উৎস। আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশনে অস্ত্র কারবার থেকে শুরু করে মাদকের জমজমাট বাণিজ্যের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।এ ছাড়া ধনাঢ্য পরিবারের সদস্যদের নিজের মাদকের আসরে ডেকে গোপন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করতেন তিনি। তার আসরে যাতায়াত করতেন দেশের বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। এমন তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

সূত্র জানায়, তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ইতোমধ্যেই বারিধারায় পিয়াসার আড়াই লাখ টাকায় ৪ হাজার স্কয়ার ফিটের বাসার সিসিটিভি ক্যামেরায় ডিভিআর সংগ্রহ করেছেন।সেই বাসায় চলত ডিজে পার্টি ও বসানো হতো সুন্দরীদের হাট।

ইতোমধ্যেই পিয়াসার ব্ল্যাকমেলিংয়ের ১৭ ভিডিও গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে বলে জানা গেছে। এসব ভিডিওতে দেশের অনেক প্রভাবশালীর উপস্থিতি রয়েছে।তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব ভিডিও প্রকৃতপক্ষেই আসল কি না, তা যাচাই-বাছাই করা হবে।

সূত্র বলছে, পিয়াসা তার ব্যবহারের বিলাসবহুল ফেরারি, বিএমডব্লিউ এবং মার্সিডিস গাড়ি কিংবা আলিশান জীবন-যাপনের জন্য টাকার উৎসের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।তবে একটি শো-রুমে রাখা পিয়াসার ফেরারি গাড়িটি জব্দ করা হবে।

পিয়াসার বাবা কাস্টমস বিভাগের একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।আর পিয়াসা পড়াশোনাও করেছেন মাত্র উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত।কিন্তু অল্প শিক্ষিত হয়েও একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ঊর্ধ্বতন পদ বাগিয়ে নেন এই মডেল।চ্যানেলটির দুই শতাংশ শেয়ারও নিজের দখলে নিয়েছিলেন তিনি।যদিও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বলছে, পিয়াসার বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ ওঠার পর তাকে সেই পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

আলোচিত রেইন ট্রি হোটেলের ঘটনায় নাম আসে এই পিয়াসার। সেই যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যান। পরে মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনাতেও মামলার এজহারে নাম আসে তার। এবার ডিবির অভিযানে গ্রেফতারের পরও ফের আলোচনায় আসেন পিয়াসা।

পিয়াসার সঙ্গে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি এখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। আর মরিয়ম আক্তার মৌ ছিল তার সাম্রাজ্যের অন্যতম সহযোগী। অপরাধ সাম্রাজ্যের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে মডেল পিয়াসা ও মৌকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পৃথক মাদক মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, পিয়াসার মাদক বাণিজ্যের বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে। ওই নেটওয়ার্কে কারা জড়িত সে সম্পর্কে জানতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া পিয়াসার মাধ্যমে যারা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন তারা অভিযোগ নিয়ে এলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পিয়াসার আসরে নামিদামি লোকজনের যাতায়াত থাকার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

রোববার রাতে গ্রেফতারের পর সোমবার তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে গুলশান ও মোহাম্মদপুরে পৃথক দুটি মামলা হয়। এরপর আদালতে উপস্থাপন করলে উভয়ের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়। পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি টিম রাত ৯টা ২৫ মিনিটে বারিধারা এলাকা থেকে পিয়াসাকে এবং ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম রাত ১২টা ৫ মিনিটে মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে মৌকে গ্রেফতার করে। পিয়াসার কাছ থেকে ৭৮০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ছয় লিটার মদ ও সিম্বা ব্র্যান্ডের ৪টি প্রিমিয়ার বিয়ার জব্দ করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আলিশান জীবনযাপন ছিল মডেল পিয়াসা ও মৌয়ের। নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী, দেশি-বিদেশি দামি পোশাক, শেলফের তাকে তাকে সাজানো জুতাসহ বাহারি সব পণ্যের সমাহার ছিল তাদের বাসায়। বাসার ভেতরে প্রবেশ করলে চোখ চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম। কারণ তাদের দৃশ্যমান আয়ের উৎসের সঙ্গে জীবনযাপনের ব্যয়ের ছিল আকাশ-পাতাল ব্যবধান।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.