খরচ অল্প, লাভ বেশি: সরিষা ক্ষেতে মৌচাষ

এ যেন হলুদ রাজ্য। যেদিকে চোখ যায় হলুদের সমারোহ। বসন্ত বাতাসে মাঠে দোল খাচ্ছে সরিষা গাছ। সরিষা ক্ষেতে স্থাপন করা হয়েছে মৌ-বাক্স। কিছুদিন পরপর সরিষা ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে মধু। ক্ষেতে মৌমাছির আনাগোনা বেড়ে যায়, সরিষার ফলনও হয়েছে দারুণ। রাঙ্গুনিয়ায় সরিষা ক্ষেতে মধু উৎপাদন করে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন চাষিরা। এতে তারা আর্থিকভাবেও দারুণ লাভবান হয়েছেন। ভালো লাভ হওয়ায় এলাকায় সরিষা ও মৌচাষে আগ্রহ বাড়ছে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ায় সরিষার আবাদ ভালো হয়। তাই যারা সরিষা চাষাবাদ করেন তাদের মৌচাষে উদ্বুদ্ধ করা গেলে অনেকের কর্মসংস্থান হবে। এতে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে অল্প খরচে মৌচাষ করে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।

উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের খণ্ডলিয়াপাড়া এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম এবার চার কানি (১৬০ শতক) জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। পাশাপাশি তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে মধু সংগ্রহে ক্ষেতে স্থাপন করেছেন মৌ-বাক্স। তিনি ইতোমধ্যে মধু আহরণ শুরু করেছেন। এতে সরিষার পাশাপাশি মধু উৎপাদন করে আর্থিকভাবে দারুণ লাভবান হচ্ছেন নজরুল।

নজরুল ইসলাম জানান, তিনি প্রতি বছর সরিষার চাষাবাদ করেন। তবে এবার কৃষি অফিসের পরামর্শে সরিষার পাশাপাশি মৌচাষ করেছেন। প্রথম পর্যায়ে একটি রানী মৌমাছির সঙ্গে ১,৬০০টি মৌমাছি সংগ্রহ করছিলেন। এখন মৌমাছি বংশ বৃদ্ধি করে সংখ্যায় ৪ থেকে ৫ হাজার হয়েছে। তিনি প্রতি ১০ দিন অন্তর ২ কেজি মধু আহরণ করতে পারেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর রাঙ্গুনিয়ায় সরিষার চাষ বেড়েছে। গত বছর ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এবার ১০২ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে সরিষার। অল্প পরিশ্রম, কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় সরিষা চাষে দিনদিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে কৃষকদের সরিষার পাশাপাশি মৌচাষে উদ্বুদ্ধ করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে একজন কৃষককে প্রায় ৫৪ হাজার টাকার মৌচাষের সরঞ্জাম প্রদান করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে মৌ-বাক্স, মধু সংগ্রহের মেশিন, ড্রাম, ওজন মেশিন।

স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের সরিষা চাষি আবদুল সালাম বলেন, ‘আমি এবার ১ একর জমিতে সরিষার চাষ করেছি। এতে আমার ৫-১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবাদের মাত্র ৭০-৭৫ দিনের মধ্যে ফলন এসেছে। ১ হেক্টর জমিতে ২ থেকে আড়াই টন সরিষা পাওয়া যায়।’ তিনি বলেন, প্রতি কেজি সরিষা ৬০-৮০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। ৩ কেজি সরিষা থেকে ১ কেজি তেল এবং ১ কেজি খৈল পাওয়া যায়। খৈল গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ১ কেজি তেলের দাম ২৫০-২৮০ টাকা এবং ১ কেজি খৈল ২৫-৩৫ টাকায় বিক্রি করা যায়। সরিষার পাশাপাশি তিনি ভবিষ্যতে মৌ চাষ করার পরিকল্পনা করছেন।

উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুজ্জামান জানান, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে সরিষার চাষাবাদ ও ফলন হয়। চলতি মৌসুমে উপজেলায় সরিষার চাষাবাদ বেড়েছে, সরিষা ক্ষেতে মৌ-চাষে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন চাষিরা। সরিষার ক্ষেতে মৌমাছি ফুলের ওপর বসলে পরাগায়নে ফসলের পুষ্টি বৃদ্ধি হয়। শুধু সরিষাই নয়, মৌমাছি ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে নানা ধরনের রবি শস্যের ফলন বৃদ্ধি করে।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ায় আগে মৌ-চাষ হতো না বললেই চলে। তাই এখন মৌ-চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ কার্যক্রম শুরুহয়েছে। এবার একজন কৃষকের মাধ্যমে সরিষার পাশাপাশি মৌ-চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি মধু আহরণ শুরু করেছেন। তার সাফল্যের কথা শুনে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।’ এবছর সরিষার পাশাপাশি রাঙ্গুনিয়ায় নতুন করে পেঁয়াজ, গমসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ ভালো হয়েছে হচ্ছে বলে তিনি জানান।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.