করোনাকে পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন ফুল চাষিরা

মাতৃভাষা ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি

শাহ আলম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করে ফুল রপ্তানি শুরু করেন। তার বাড়ি সাভার বিরুলিয়া ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে। একদিন পাশের গ্রাম সদুল্লাপুরের এক ব্যক্তিকে গোলাপ চাষ করতে দেখে ২২ বছর আগে শুরু করেন গোলাপ চাষ। সেই গোলাপ তাকে তৃপ্তির হাসিতে ভাসিয়েছিল। কিন্তু তার সেই হাসি এতদিন পর করোনা মহামারিতে হারিয়ে গেছে। এক করোনাতেই প্রায় ২০ লাখ টাকা লোকসানে তার এখন পথে বসার উপক্রম।

শাহ আলম জানান, ভারত ও চীন থেকে ফুল এনে ব্যবসা করেন তিনি। বনানী ও সাভারে দোকান। সব মিলিয়ে ফুলের ব্যবসা ভালোই চলছিল। কিন্তু গত পাঁচ মাস সবকিছু বন্ধ থাকায় ব্যবসা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। তিনি বলেন, দোকান বন্ধ থাকলেও গত কয়েক মাস ছয় জন কর্মচারীকে ২৪-২৫ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়েছে। এখন আর টিকে থাকতে পারছেন না বলে জানান তিনি।

শাহ আলাম বলেন, তিন বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করে অনেক অনুষ্ঠানে ফুল নিয়ে অংশ নিয়েছেন। এখন দু-চারটি ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিক্রি ছাড়া কোনো বিক্রি নেই। কারণ কোনো অনুষ্ঠানও নেই। তিনি বলেন, এখন নতুন করে ফুল চাষের জন্য জমি উপযোগী করতে নিজের সব সঞ্চয়ের সঙ্গে ধারদেনাও করতে হয়েছে। এত কিছুর পরও সরকারের কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি। এখন সামনে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসই একমাত্র ভরসা। সদুল্লাপুরের মো. আনোয়ার হোসেন জানান, অবস্থা খারাপ বলে চাষিরা বাগানের পাশেই ফুল বিক্রি করছেন। এভাবে সরাসরি বাগান থেকে আগে কখনো ফুল বিক্রি করেননি তারা। বর্গা জমিতে তিনি ফুল চাষ করেন। লকডাউনের পর গরু-ছাগল বিক্রি করেন। বিদেশে অবস্থানরত ভাইয়ের কাছে ঋণ করে আবার ফুল চাষ শুরু করেন।

তিনি বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেও প্রণোদনার কোনো টাকা পাননি। একই অভিযোগ ফুলচাষি মো. মামুন মিয়ার। বর্তমানে তিনি নিজের আর বর্গা মিলিয়ে দেড় বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করছেন। তবে মামুন আশায় আছেন এই ভালোবাসা দিবস তার আগের অবস্থা কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দিতে পারে। ফুলের বর্তমান বাজার সম্পর্কে শাহবাগ ফুলের বাজারের মার্কেট কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিউ লাভ লাইন পুষ্পালয়ের মো. জামাল হোসেন বলেন, করোনায় ফুলের ব্যবসায় রীতিমতো ধস নেমেছে। সাভারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চাষিরা এখনো আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি, তাই ফুল কম আসছে। তবে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় আগের চেয়ে চাহিদা কিছুটা বেড়েছে বলে জানান তিনি। তবে করোনায় ফুল চাষিদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ায় অনেকে ফুল চাষে ফিরতে পারেননি।

সাভারের গোলাপ গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, গোলাপ চাষিরা ভালো নেই। গোলাপ ক্রেতাশূন্য দীর্ঘ সময় তাদের বড় রকমের ক্ষতির মুখে ফেলেছে। কেন এলাকার চাষিরা ঋণ পায়নি এ প্র্রশ্নের উত্তরে সাভার কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি জানুয়ারি মাসে এখানে যোগ দেন। এ বিষয় তার জানা নেই। একই প্রশ্ন কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদকে করা হলে মোবাইল ফোনে জানান, কার্যালয়ে এসে উত্তর দেবেন। কিন্তু তিনি আসেননি।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোজ্জামেল হক জানান, এলাকার ৯৫ শতাংশই বর্গাচাষি। কোভিডের সময় ১০০ জন চাষির কাগজপত্র তারা সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে জমা দেন। কিন্তু তার জানা মতে, কেউ ঋণ পাননি। কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, বিরুলিয়ার সাতটি গ্রামে ২৫০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষে সম্পৃক্ত অন্তত ৯০০ চাষি। তাদের ক্ষতির পরিমাণ কেমন জানতে চাইলে কৃষি কর্মকতা মো. মোজ্জামেল হক বলেন, প্রতি হেক্টরে সাত বিঘা জমি আর প্রতি বিঘা জমিতে বছরে ৪ লাখ ফুল হয়। এক টাকা করে ফুল হলেও ৭০ কোটি টাকা এই এলাকার ফুল চাষিরা বছরে আয় করে। কিন্তু করোনার কারণে তা একেবারেই বন্ধ ছিল।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.