এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে গণধর্ষণ: ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা

সিলেট সরকারি এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে স্বামীকে আটকে রেখে এক স্ত্রীকে (১৯) গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির খবরে বলা হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটলেও খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

এদিকে এই গণধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমানসহ ৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে।

শনিবার ভোরে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরান থানায় এ মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকালে ভুক্তভোগী নারী তার স্বামীকে নিয়ে এমসি কলেজে ঘুরতে আসেন। ঘোরার এক পর্যায়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তরুণীর স্বামী সিগারেট খাওয়ার জন্য এমসি কলেজের গেইটের বাইরে বের হন। এসময় কয়েকজন যুবক তার স্ত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যেতে চান। এতে স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধোর শুরু করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এক পর্যায়ে স্ত্রী ও তার স্বামীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমসি কলেজের হোস্টেলে নিয়ে যান। সেখানে স্বামীকে বেঁধে ছাত্রলীগের ৮/৯ জন নেতাকর্মী স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।

এসময় তাদের সাথে থাকা ৯০ টি মডেলের একটি প্রাইভেট কারও ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে প্রাইভেট কারটি তাদের জিম্মায় নেয় এবং স্ত্রীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) প্রেরণ করে।

এদিকে, অভিযুক্তদের ধরতে অভিযানে নেমে শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে পুলিশ অভিযুক্ত সাইফুর রহমানের কক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। তবে এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমরা রাতে এমসি কলেজের হোস্টেলে অভিযান চালিয়ে সাইফুর রহমানের রুম থেকে একটি পাইপগান, চারটি রামদা ও একটি চাকুসহ বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করি। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা প্রক্রিয়াধীন।

প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত ৬ জনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ, তারা হলেন- এমসি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ও কলেজটিতে ইংরেজিতে মাস্টার্সে অধ্যয়রত শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, একই শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুর রহমান মাছুম, এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা এম সাইফুর রহমান, কলেজ ছাত্রলীগ নেতা অর্জুন এবং বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ও তারেক।

এদের মধ্যে সাইফুর রহমানের বাড়ি বালাগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি দিরাইয়ে, মাহফুজুর রহমান মাছুমের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়, অর্জুনের বাড়ি জকিগঞ্জে, রনি হবিগঞ্জের এবং তারেক জগন্নাথপুরের বাসিন্দা। তাদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন শাহপরান থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) লিপটন পুরকায়স্থ।

তবে দীর্ঘদিন ধরে কলেজে কমিটি না থাকায় তাদের কোনো পদ-পদবি নেই। কিন্ত কলেজের রাজনীতিতে এসব নেতারা সক্রিয় ছিলেন।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জোর্তিময় সরকার বলেন, অভিযোগকারী নারীর স্বামীর বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায়। তিনি অভিযোগ করেছেন, শুক্রবার বিকালে তিনি স্ত্রীসহ টিলাগড় এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। এসময় ৪/৫ জন তরুণ তাদের জিম্মি করে ছাত্রাবাসের ভেতরে নিয়ে যায়। পরে ছাত্রাবাসের ভেতরে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।

এমসি কলেজের হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন জানান, কয়েকজন ছাত্রাবাসে এক দম্পতিকে আটক রাখে বলে অভিযোগ পেয়েছি। পরে পুলিশ গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদও একই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, তাদের কেনো আটকে রাখা হয়েছিলো এবং তাদের সাথে কী আচরণ করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.