ইউক্রেনকে অবিলম্বে ন্যাটো সদস্য করার দাবি জেলেনস্কির

ইউক্রেন তার ভৌগোলিক অখন্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে পারে না। তারপরও যুদ্ধ যেনো আর না বাড়ে সেজন্য একটা ‘সমঝোতা স্মারক’ এ পৌঁছতে পারে। ইউক্রেন যদি ন্যাটোর সদস্য হত তবে যুদ্ধ শুরুই হত না। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে ‘সমঝোতা’র বিষয়ে সিএনএন এর ফরিদ জাকারিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এমন মন্তব্য করেছেন।

জেলেনস্কির কাছে ফরিদ জাকারিয়ার প্রশ্ন ছিলঃ প্রেসিডেন্ট বাইডেন পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী বলেছেন। কিন্তু আপনি তার সাথে বসার আগ্রহ দেখিয়েছেন। পুতিনের সাথে সাথে দরকষাকষি করাটা কেমন হবে?

জবাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেনঃ আমি পুতিনের সাথে দরকষাকষি করতে প্রস্তুত। আগেও প্রস্তুত ছিলাম। গত দুই বছর ধরেই প্রস্তুত আছি। আর, আমি মনে করি দরকষাকষি করা ছাড়া যুদ্ধটা শেষ করা যাবে না। অনেকে বলছেন এই সংলাপ করে কিছুই হবে না। তারা ঠিক বলছেন না। আমি মনে করি, আমাদের যদি দরকষাকষি করে যুদ্ধ শেষ করার ১% ও সুযোগ থাকে সেই সুযোগটা কাজে লাগানো উচিত। রাশিয়ানরা আমাদের হত্যা করতে এসেছে। প্রতিদিনই আমাদের নিরীহ মানুষরা মারা যাচ্ছেন। আমরা আমাদের আত্মমর্যাদা নিয়ে টিকে আছি। কিন্তু আমাদের মানুষতো মারা যাচ্ছে। সেজন্যই মনে করি, দরকষাকষি করাটা জরুরী, দরকষাকষির সুযোগটা কাজে লাগানো উচিত। পুতিনের সাথে কথা বলার সম্ভাব্য সুযোগটাও কাজে লাগানো উচিত। কিন্তু এইসব উদ্যোগ যদি ব্যর্থ হয় তবে বুঝতে হবে সেটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধই হবে।

ফরিদ জাকারিয়া তখন বলেনঃ আপনিতো রাশিয়ার দাবিগুলো জানেন। তারা চাইবে আপনি ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিন। এছাড়া দুটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্রেরও স্বীকৃতি দেন। ইউক্রেনের সংবিধানে সম্ভবত এমন ‘গ্যারান্টি’ জুড়তে বলতে পারে যাতে ইউক্রেন কখনো ন্যাটোতে যোগ দিতে না পারে। আপনি কি এইসব মানবেন?

এর জবাবে জেলেনস্কি বলেনঃ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমরা আমাদের ভৌগোলিক অখন্ডতা এবং সার্বভৌমত্বকে খন্ডন করে এমন কোন কিছুই মানবো না। আমাদের জনগণও এসব নিয়ে কথা বলেছে। তারা রাশিয়ানদের ফুলের তোড়া নিয়ে স্বাগত জানায় নি। তারা অস্ত্র হাতে নিয়েছে। তারা ওদের সাহসের সাথে লড়ছে। সুতরাং আপনি জোর করে অন্য দেশের মানুষের হৃদয়কে জয় করতে পারবেন ন। অন্য কোন দেশকে দিয়ে যে কোন স্বীকৃতি আদায়ও করে নিতে পারবেন না। রাশিয়ানরা যেটা করছে সেটা রাজনীতি নয় বাস্তবতা হলো রাশিয়ানরা মানুষকে হত্যা করছে। ইউক্রেনের মানুষ রাশিয়ানদের ঘৃণা করছে, করেও যাবে। কারণ তারা ওদের (ইউক্রেনের) সন্তানদের হত্যা করেছে। সুতরাং এ ধরনেএ সমঝোতার চিন্তা করা একদমই ভুল। আমি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এবং নাগরিক হিসেবে এ ধরনের কোন স্বীকৃতি দিতে পারি না। ইউক্রেন তার ভৌগোলিক অখন্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে পারে না। তারপরও যুদ্ধটা যেনো আর না বাড়ে সেজন্য আমরা একটা ‘সমঝোতা স্মারক’ এ পৌঁছতে পারি।

রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ন্যাটো যে সহায়তা দিয়েছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন যদি ন্যাটোর সদস্য হত তবে যুদ্ধটা শুরুই হত না। আমি আমার দেশের জন্য, আমার জনগণের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেতে চাই। ন্যাটো সদস্যরা যদি আমাদের জোটে দেখতে চায়, তাহলে অবিলম্বে তা করুক। কারণ প্রতিদিন (আমাদের) মানুষ মারা যাচ্ছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.