×
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত : তারিখ - ২০২৫-০৮-০৪, সময় - ০৪:২৫:০৫জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, গাজা উপত্যকায় পাঁচ বছরের নিচের সব শিশু এখন প্রাণঘাতী অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। ইসরায়েল অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সহায়তা প্রবেশ আটকে রাখায় ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, এই বয়সসীমার প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার শিশু পুষ্টি সহায়তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা নিরাপদ পানি, মাতৃদুগ্ধের বিকল্প ও পুষ্টিকর চিকিৎসা খাদ্য থেকে বঞ্চিত।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সিমা জিলানি আলজাজিরাকে বলেন, অপুষ্টি ‘তাদের পুরো শরীরকে প্রভাবিত করে’ এবং শিশুদের বহু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে।
গাজায় অনাহার শিশুদের জন্য মানসিকভাবে গভীর আঘাতমূলক এবং এতে করে ‘তাদের বিকাশজনিত মাইলফলকগুলোতে পৌঁছনো সম্ভব হবে না’।
এদিকে গাজার হাসপাতালগুলো সোমবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও
অপুষ্টিতে আরো ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে এক শিশুও রয়েছে। গাজার
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই পর্যন্ত
অনাহারজনিত কারণে মোট ১৮১ জন মারা গেছে, যাদের মধ্যে ৯৪টি শিশু।
মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, ‘সংক্রমণ ও তীব্র অপুষ্টির’ ফলে শিশুদের মধ্যে তীব্র পক্ষাঘাতজনিত সমস্যার ‘গুরুতর বৃদ্ধি’ লক্ষ করা যাচ্ছে।
এক বিবৃতিতে তারা আরো বলেছে, এখন পর্যন্ত গিলিয়ান-বারে সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। এই বিরল রোগটি সাধারণত হঠাৎ করে পুরো শরীরে অবশতা ও পেশিশক্তি হারিয়ে ফেলার কারণ হয়।
অন্যদিকে গাজার সরকার জানিয়েছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে ২২ হাজারের বেশি মানবিক সহায়তা বহনকারী ট্রাক উপত্যকায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, যা একটি পরিকল্পিত ‘অনাহার, অবরোধ ও বিশৃঙ্খলার’ অংশ। ইসরায়েল গত ২ মার্চ দুই মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতি শেষ করে আবার হামলা শুরু করার আগে থেকেই এই অবরোধ আরোপ করে।
১৪ বছর বয়সী মোসাব আল-দিবস গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে প্রায় দুই মাস ধরে ভর্তি। মে মাসে তার পরিবারের তাঁবুতে ইসরায়েলি বিমান হামলা হলে তার মাথায় মারাত্মক আঘাত লাগে। ছেলেটি এখন আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও মারাত্মকভাবে অপুষ্ট, কারণ হাসপাতালে তার খাবার সরবরাহের আর কোনো উপায় নেই। তার মা শাহিনাজ আল-দিবস বলেন, ‘মোসাব এখন ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছে। আঘাতজনিত কারণে তার খিঁচুনি হয়। এমনকি তার স্নায়ুগুলোও শক্ত হয়ে গেছে।’
গাজার উত্তরে একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তুদের মধ্যে একজন সামাহ মাতার। তিনি জানান, তার দুই ছেলে—ছয় বছর বয়সী ইউসুফ ও চার বছর বয়সী আমির সেরিব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত এবং তাদের জন্য বিশেষ খাদ্য প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, ‘যুদ্ধ শুরুর আগে ইউসুফের ওজন ছিল ১৪ কেজি, এখন সেটা নেমে এসেছে ৯ কেজিতে। আমিরের ওজন ছিল ৯ কেজি, এখন সেটা ৬ কেজিরও কম। যুদ্ধের আগে ওদের স্বাস্থ্য ছিল চমৎকার। এখন কোনো বেবি ফর্মুলা নেই, ডায়াপার নেই, এমনকি তাদের জন্য ময়দাও খুঁজে পাই না। চিনি, যেটা ওদের খাদ্যের মূল উপাদান, সেটাও নেই।’
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য পরিচালক আহমাদ আলহেন্দাওয়ি আলজাজিরাকে জানান, গাজার পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত ভয়াবহ’। তিনি বলেন, ‘এটা প্রায় চার মাস ধরে চলা এই অবরোধ, এই অনাহার, যা সপ্তাহ আর মাস ধরে জমে উঠেছে এবং এই চরম অপুষ্টি ও অনাহার থেকে ফিরে আসতে হলে দরকার টেকসই খাদ্য সরবরাহ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও শিশুদের জন্য পুষ্টিসহায়ক খাদ্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়তো ফিরিয়ে আনা সম্ভব, কিন্তু আমি আশঙ্কা করছি, কিছু ক্ষতি এই পর্যায়ে এসে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।’