×
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত : তারিখ - ২০২৫-০৩-১৭, সময় - ০৭:১৩:০৯২০১৩ সালে ক্লেইনার পার্কিন্সের এক জরিপ অনুযায়ী প্রতিদিন একজন মানুষ গড়ে ১০০-১৫০ বার তার মোবাইল ফোন চেক করতো। ৩ বছরের মাথায় ২০১৬ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২৬১৭ বারে! ২০২৫ এর রিপোর্ট দেখলে দুনিয়া হয়ত নতুন করে ভাবতে শুরু করবে। আমেরিকান শিশু-কিশোরদের ৯২ ভাগই প্রতিদিন অনলাইনে যায়। প্রতি ৫ জনে ১ জন কিশোর গভীর রাতে ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে শুধু এটা দেখার জন্যে যে, তার মোবাইলে নতুন কোনো মেসেজ এসেছে কি না। (জার্নাল অব ইয়ুথ স্টাডিজ)
একজন পূর্ণ বয়স্ক কানাডিয়ান গড়ে দিনে দু’ঘণ্টা সোশাল মিডিয়ায় কাটায়। আর শিশুকিশোররা কাটায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। তার মানে, আজ যে শিশুর বয়স ৮, সে তার জীবনের ১৫টি বছরই কাটিয়ে দেবে অন স্ক্রিনে।
পৃথিবীতে ফেসবুক ব্যবহার করছে এখন ২০০ কোটিরও বেশি মানুষ। নিজের স্মার্টফোনে টুইটার, ইনস্টাগ্রাম বা স্ন্যাপচ্যাট নেই এমন তরুণ-তরুণীকে বোধ হয় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফেসবুকে নাকি প্রতিদিন আমরা ১৮০ কোটি ছবি আপলোড করি!
গত দুই দশকে স্মার্টফোন এবং এখানে রাখা যায়, এমন সব যোগাযোগ ও ম্যাসেজিং অ্যাপ আমাদের জীবনকে কতটা প্রভাবিত করেছে, তার কিছু নমুনা পাওয়া যায় এ তথ্যগুলোতে!
কিন্তু পৃথিবীব্যাপী এ তথ্যগুলো কি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা? মোটেই না। বরং সিলিকন ভ্যালির গুটিকয় চতুর প্রোগ্রামার একসাথে মিলে সব জেনেবুঝেই এই ফোন, অ্যাপ এবং সোশাল মিডিয়ার সাইটগুলোকে এমনভাবে তৈরি করছে, যা সাধারণ মানুষকে এটা ব্যবহারে আসক্ত করে ফেলছে।
আসক্তিকর প্রযুক্তি ডিজাইন ক্লাস!
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক বিজে ফগ। প্রযুক্তিকে কীভাবে মানুষের মনোলোভা করে তুলতে হয়, তার কৌশল শেখানোর মাস্তানলোক মনে করা হয় আচরণ মনোবিজ্ঞানের এই অধ্যাপককে। ‘পারসুয়েসিভ টেকনোলজি ডিজাইন ক্লাস’ নামের ঐ ক্লাসে তিনি ছাত্রদের শেখান কীভাবে মানুষের মনোজগতের সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্যগুলোকে কাজে লাগিয়ে আকর্ষণীয় প্রযুক্তিপণ্য তৈরি করা যায়!
তার সফল ছাত্রদের একজন নির ইয়াল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা রপ্ত করে সিলিকন ভ্যালিতে যিনি বেশ ভালোভাবেই গুছিয়ে নিয়েছেন নিজের আখের। ‘সানফ্রান্সিককো বে’সহ অপরাপর শহরগুলোতে আয়োজিত তার কনফারেন্সে টিকেটপ্রতি ১৭০০ (!) ডলার কেটে মানুষ আসে বক্তৃতা শুনবার জন্যে। যেসব বক্তৃতায় নির ইয়াল শেখান প্রযুক্তি ব্যবহারে কীভাবে মানুষকে অভ্যস্ত করানো যায়। আর বক্তৃতা শুনতে যারা আসে, তাদের মধ্যে আছে ডিজাইনার, প্রোগ্রামার এবং উদ্যোক্তা। নির ইয়ালের লেখা একটি বই হলো ‘Hooked: How to Build Habit-Forming Products’। নাম থেকেই স্পষ্ট নির ইয়ালের কাজের উদ্দেশ্য!
ইয়াল লিখেছেন, যেসব প্রযুক্তি পণ্য আমরা এখন ব্যবহার করি তা ‘আসক্তি’ না হলেও এক ধরনের বাধ্যতামূলক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে আমাদের জীবনে! একটু পরপর নতুন মেসেজ দেখার তাড়না আমরা বোধ করি। ইউটিউব, ফেসবুক বা টুইটারে ৫ মিনিটের জন্যে ঢুকে ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে দেয়া এখন হামেশাই ঘটছে! আর এর কোনোটাই ঘটনাচক্রে ঘটে নি! পুরো ব্যাপারটাই একদল ডিজাইনারের সুচিন্তিত গবেষণার ফসল!
সূক্ষ্ম সব মনস্তাত্ত্বিক কৌশল!
নির ইয়াল তার বইতে কিছু সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক কৌশলের কথা লিখেছেন। যেমন, ভ্যারিয়েবল রিওয়ার্ডস! একজন মানুষ যদি প্রতিনিয়তই তার পছন্দের জিনিস পেতে থাকে, সেটার প্রতি তার আকর্ষণ সেভাবে থাকে না। কিন্তু মাঝে মাঝে যখন সে পায়, প্রত্যাশা ছাড়া আকস্মিকভাবে পায়, তখন তার আকর্ষণের মাত্রা বেড়ে যায় অনেক! প্রযুক্তি ডিজাইনাররা এ কৌশলকেই কাজে লাগান। যেমন, ‘লাইক’। নানাজনের কাছ থেকে পাওয়া লাইকগুলো একজন ব্যবহারকারী কিন্তু সাথে সাথেই দেখতে পায় না। অ্যাপ-ডিজাইনটাই এমনভাবে করা হয় যাতে প্রথমে এসে এগুলো কোথাও জমে। তারপর ব্যবহারকারীর মুড বুঝে সেটা তাকে দেখানো হয়! ফলে যা হওয়ার তাই হয়। প্রচণ্ডভাবে উদ্দীপ্ত হয় বিশেষ ঐ ব্যবহারকারীর আবেগ, উত্তেজনা! পরিণামে সে বারবার ফিরে আসে ঐ অ্যাপটিতে।
আরেকটি কৌশল হলো মানুষের নেতিবাচক আবেগকে নিয়ে খেলা! একজন মানুষ যখন নিঃসঙ্গ থাকে, বিষণ্ন বা হতাশ বোধ করে, দ্বিধাগ্রস্ত বা বিরক্ত থাকে অথবা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, সেসময়গুলোতে তার আচরণ বা সিদ্ধান্তগুলো খুব ভেবেচিন্তে হয় না। অস্থিরতা বা অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে সে হয়তো মুহূর্তের আবেগ বা খেয়ালিপনার বশবর্তী হয়েই কিছু একটা করে ফেলে বা বলে ফেলে! আয়াল বলেন, প্রযুক্তি ডিজাইনাররা এসব দুর্বল মুহূর্তেরই সুযোগ নেয়। বিষণ্নতা, একঘেয়েমি বা অন্যের মতামতের মুখাপেক্ষী মুহূর্তগুলোতে ‘লাইক’ বা এ জাতীয় ফিচারগুলোর ব্যবস্থা করে দেয় যা তাকে এসব সময়ে বেশি বেশি করে এগুলো ব্যবহারে প্রলুব্ধ করে।
আরো ভয়ংকর হলো, এসব ডিজাইন কিন্তু গৎবাধা, সবার জন্যে একই স্টাইল করা হয় না! বরং বিশেষ এলগরিদমের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষকেই এরা টার্গেট করে আলাদা আলাদাভাবে! কিছুদিন আগে ফেসবুকের একটি ফাঁস হয়ে যাওয়া গোপন রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, ফেসবুকের একজন কিশোর ব্যবহারকারী কখন মানসিক অনিশ্চয়তায় ভুগছে বা কখন বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছে, ফেসবুক তা ঠিক ঠিক ধরতে পারছে এবং সে অনুযায়ী তাকে ‘কনফিডেন্স বুস্ট’ দিচ্ছে!
স্মার্টফোন আর জুয়ার মেশিনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই!
জে ফগের আরেক ছাত্র ট্রিস্টান হ্যারিস। গুগলের প্রাক্তন প্রডাক্ট ম্যানেজার। ট্রিস্টান হ্যারিস অবশ্য নির ইয়ালের মতো শোষকের শোষণ প্রক্রিয়ার পুরো সহযোগী হয়ে যান নি। স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে তিনিও পড়েছেন। বিজে ফগের পারসুয়েসিভ টেকনোলজি ডিজাইন ক্লাসে তিনিও অংশ নিয়েছেন। মাস্টার্সে থাকতে থাকতেই গড়ে তোলেন নিজের একটি সফটওয়ার কোম্পানি। কিন্তু বছর চারেক পর বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান গুগল তাকে নিয়ে নেয়, দায়িত্ব দেয় প্রডাক্ট ম্যানেজারের। জিমেইলের যে ইনবক্স ডিজাইনটি এখন আমরা দেখি, তা হ্যারিসেরই করা।
কিন্তু কাজ করতে গিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই হ্যারিস হাঁপিয়ে উঠলেন। মনে হলো, এ কি করছেন তিনি! সেই গুটিকয় প্রযুক্তিবিদেরই তো একজনে পরিণত হয়েছেন তিনি, যাদের করা ডিজাইনগুলোই আজ ঠিক করছে, পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ কীভাবে সময় কাটাবে!
হ্যারিস ভেবে দেখলেন, এভাবে তো চলতে পারে না। একটা কিছু বিহিত করা দরকার! এরপর রাতদিন খেটে তিনি লিখলেন ১৪৪ পৃষ্ঠার এক বিশাল প্রেজেন্টেশন- ‘A call to minimize distraction and respect user’s attention by a concerned Product Manager & Entrepreneur’. তার এই প্রেজেন্টেশনটির মূল বিষয় ছিল, প্রযুক্তির নামে বিক্ষিপ্ততা সৃষ্টিকারী অ্যাপ এবং মেইল ডিজাইনগুলো যে আসলে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, সৌহার্দ্য, হৃদ্যতা- এসবকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, বারটা বাজাচ্ছে ছোট ছোট বাচ্চাদের মনোযোগ ক্ষমতার- সেই বিষয়টির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
রিপোর্টটি গুগলের ভেতরে বেশ আলোচনা-পর্যালোচনার জন্ম দেয়। এমনকি ল্যারি পেজ, গুগলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, তিনিও বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন এটার ব্যাপারে। যদিও শেষ পর্যন্ত, কাজের কাজ কিছুই হয় নি। হ্যারিসের এই সচেতনতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা গুগলের ভেতরে কোনো সফলতারই মুখ দেখে নি।
তিন বছর কাজ করার পর গুগল ছেড়ে দেন হ্যারিস। এখন তার প্রধান কাজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে উদ্যোক্তা এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে পণ্য নির্মাণে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনে, সেই বিষয়ে জনমত সৃষ্টি এবং শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের জন্যে নয়, মানুষের কল্যাণচিন্তাকেও যাতে তারা গুরুত্ব দেয়, সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বোঝানো।
ট্রিস্টান হ্যারিস বলেন, “স্মার্টফোন আর জুয়ার মেশিনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। দুটোই মানুষকে এক ধরনের আশা-নিরাশার দোলাচোলে রাখে। একজন মানুষ যখন জুয়ার মেশিনের হাতল ঘোরায়, তখন কিন্তু সে জানে না যে, তার জন্যে কী অপেক্ষা করছে! হতে পারে সবচেয়ে বড় পুরস্কারটা সে পাবে, হতে পারে সে কিছুই পেল না। আর দুরু দুরু বক্ষের এই অনিশ্চয়তার জন্যেই জুয়া মানুষের কাছে এত জনপ্রিয়! স্মার্টফোনও তাই। নোটিফিকিশেন আইকনটা যখন সে দেখছে, তখনও কিন্তু সে জানে না, এটা খুললে সে কী দেখতে পাবে। নতুন কোনো মেইল তার জন্যে অপেক্ষা করতে পারে, নতুন লাইক পড়তে পারে, অথবা একেবারে কিছুই না দেখতে পারে। আর সেজন্যেই স্মার্টফোনকে ঘিরে আমাদের এত আসক্তি!
ট্রিস্টান হ্যারিস সেই গুটিকয় প্রযুক্তিবিদের একজন, যিনি প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন যে, আমাদের স্মার্টফোনের প্রোগ্রামিং করছে যে কোম্পানিগুলো, তারা তাদের সমস্ত শ্রম, মেধা, মনোযোগ ঢেলে দিচ্ছে শুধুমাত্র এটা নিশ্চিত করার জন্যে যে আমরা এ ফোনটাতে আসক্ত হয়ে থাকব।
লাইক, ইমোজি, ফলোয়ার আর স্ট্রিকস- জুয়ার পুরস্কার!
ট্রিস্টান হ্যারিস বলেন, জুয়াখেলায় জিতে গেলে যেসব পুরস্কার মানুষ পায়, ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামের ‘লাইক’ এবং টুইটারের মনোলোভা ইমোজি আর ‘নতুন ফলোয়ার’ অনেকটা সেরকমই! এবং এগুলোর কোনটা দিয়ে কীভাবে একজন মানুষকে দীর্ঘক্ষণ ধরে আটকে রাখা যাবে, তার বিস্তারিত নিয়ে তৈরি করা আছে পরিকল্পিত ছক!
যেমন ধরুন, স্ন্যাপচ্যাট। টিনএজারদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এই অ্যাপটি এখন ব্যবহার করছে পৃথিবীর প্রায় ১৬ কোটি মানুষ। আপনি যদি স্ন্যাপচ্যাটের ‘স্ট্রিকস’ ফিচারটি দেখেন, তাহলেই ব্যাপারটা বুঝবেন। স্ন্যাপচ্যাটে আপনি কার সাথে কতদিন মেসেজ আদান-প্রদান করলেন ‘স্ট্রিকস’ ফিচারটি সেটারই হিসাব দেখায়। তো ছোট ছেলেমেয়েরা যারা এটা ব্যবহার করে তারা ভাবে, “ওহ! অমুকের সাথে আমার ৬৪৩ দিন মেসেজ আদান প্রদান হয়েছে। আর ক’দিন হলেই ১০০০। এটা মিস করা যাবেই না।” ফলে বাবা-মায়ের সাথে কয়েকদিনের জন্যে যখন তারা বাইরে যায়, তখন সমবয়সী আরো ৫ জনের কাছে তার একাউন্টের পাসওয়ার্ড দিয়ে যায়, যাতে তার হয়ে তার বন্ধুরা স্ট্রিকস কাউন্ট বাড়াতে থাকে। এখন আপনি বলুন, এরকম অ্যাপ যারা ডিজাইন করেছে, তাদের উদ্দেশ্য কি মানবকল্যাণ ছিল? না কি ছিল মানুষকে এটা ব্যবহারে আসক্ত করে ফেলা?
‘পুল টু রিফ্রেশ’- আরেক কৌশল!
লরেন ব্রিচটার, টুইটারের বহুল জনপ্রিয় ‘পুল টু রিফ্রেশ’ ফিচারের উদ্ভাবক। নিজের তৈরি অ্যাপ টুইটি’র জন্যে এ ফিচারটা বানানোর মূল কারণ ছিল আসলে অ্যাপটি ‘রিফ্রেশ’ করার সুযোগ তিনি আর কোথাও দিতে পারছিলেন না। যাই হোক, ‘পুল টু রিফ্রেশ’ ফিচারটা এত জনপ্রিয় হলো যে, ২০১০ সালে টুইটার যখন টুইটিকে কিনে নিল, তখন এ ফিচারটি তারা নিল শুধু নয়, আজ পর্যন্ত টুইটারের জনপ্রিয়তম ফিচার হিসেবে এটা রাজত্ব করছে! লরেন ব্রিচটার বলেন, এটা খুবই আশ্চর্য যে, এখনকার সময়ে অ্যাপগুলো যখন নিজে নিজেই আপডেট হতে পারে, তখনও এ ফিচারটি টিকে আছে। আসলে এর সাথে জুয়ামেশিনের খুব ঘনিষ্ঠ একটা যোগ আছে। জুয়াড়িদের যদি জুয়ামেশিনের হাতলটা ঘোরাতে দেয়া না হতো, জুয়ার এত আকর্ষণ থাকতো কি না সন্দেহ। পুল টু রিফ্রেশের ক্ষেত্রেও হয়তো তাই হয়েছে।
ডোপামিন হিট
জাস্টিন রোজেনস্টাইন, লিয়া পার্লম্যান- নামগুলো সিলিকন ভ্যালির কয়েকটি পরিচিত নাম। ২০০৭-২০০৯ সময়টায় ফেসবুককে আকর্ষণীয় ডিজাইনে গড়ে তোলার কাজে যেসব তরুণ প্রোগ্রামার দিবানিশি কাজ করেছে, এরা তাদের দলের। এসব ডিজাইনের একটি ছিল ‘লাইক’। নিজের পছন্দকে জানানো বা অন্যের পছন্দ পাওয়ার ফেসবুকের এই ফিচারটি এত ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেল যে, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ প্রায় সব সোশাল মিডিয়া কোম্পানিই একই ধরনের ফিচার অ্যাড করল তাদের অ্যাপে।
আসলে এই জনপ্রিয়তার পেছনে কাজ করেছে মানুষের মনোজগতের কার্যকারণ! মানুষের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামে এক ধরনের কেমিকেল নিঃসরণ ঘটে প্রতিনিয়ত। কিন্তু হঠাৎ যদি এমনকিছু ঘটে যা প্রত্যাশার চেয়েও ভালো, তখন আকস্মিকভাবে বেড়ে যায় এই ডোপামিনের প্রবাহ এবং ভালো লাগাকে আরো বাড়াতে ব্রেন তখন ঐ কারণটাকেই আরো বাড়াতে বলে।
ফেসবুক, টুইটার বা ইনস্টাগ্রামের ‘লাইক’ এ ব্যাপারটাই ঘটায়। লাইক পাওয়ার সুখানুভূতি পেতেই বারবার আমরা একই পোস্ট বা কমেন্ট করতে থাকি। দেখতে থাকি, নতুন কী এল!
আর সুচতুরভাবেই যে ডিজাইনারটা এটা করেছেন, তা স্বীকার করলেন ক্রিস মার্সেলিনোও। আইফোনের শুরুর সময়টায় যিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন এর জন্যে নানারকম অ্যাপ ও ডিজাইন কৌশল গড়ে তুলতে। আজ একটা ‘উবার’ ডাকা থেকে শুরু করে নতুন কোনো খবর পড়া অবধি সবকিছুর জন্যেই যেসব অ্যাপের ওপর আমরা নির্ভরশীল!