×

  • নিউজ ডেস্ক

    প্রকাশিত : তারিখ - ২০২৫-০৩-২২, সময় - ০৮:৫২:০৯

সততা ও দক্ষতার সমন্বয়ে সাফল্য- নৈতিক শক্তির ভূমিকা এবং দক্ষতা গঠনে তার প্রভাব

সফলতার পথে এগিয়ে যেতে গেলে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ—দক্ষতা না সততা? অনেক সময় মনে হয় দক্ষতা, আবার কখনো মনে হয় সততা। কিন্তু আসলেই কি যে কোনো একটা বেশি প্রয়োজন? আসলে সফলতার জন্যে দক্ষতা এবং সততা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, যদি কোনটা বেশি প্রয়োজন হয়, তা হল সততা। কেননা, দক্ষতা সততা সৃষ্টি করতে পারে না, তবে সততা দক্ষতা সৃষ্টি করতে পারে।

আসলেই, বৈষয়িক শক্তির উৎকর্ষের প্রতীক দক্ষতা। আর নৈতিক শক্তির উৎকর্ষের প্রতীক সততা। সাফল্যের জন্যে দক্ষতা এবং সততা দুটোই দরকার। তবে বেশি দরকার সততা। কারণ দক্ষতা সততা সৃষ্টি করতে পারে না। কিন্তু সততা দক্ষতা সৃষ্টি করতে পারে।

ব্যক্তিজীবনে যত ধরনের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা বা ডিগ্রি যা-ই থাকুক না কেন, সততা যদি না থাকে তাহলে দক্ষতা কখনো প্রাচুর্য আনতে পারে না। বরং তা সংগ্রহ ও ভোগের স্পৃহা বাড়ায়। সেই সাথে বাড়ায় আসক্তি ও দুর্দশা। কিন্তু দক্ষতার সাথে যখন সততা থাকে তখন তা সেবা ও দানের স্পৃহাকেই বাড়িয়ে দেয়। সততার প্রক্রিয়াই হচ্ছে—এটি দক্ষতা সৃষ্টি করে নিজেকে পরিণত করে অন্যের বিশ্বস্ততার কেন্দ্রবিন্দুতে। একজন মানুষের ভেতর থেকে যখন নৈতিক ও আত্মিক শক্তি জাগ্রত হয় তখন দক্ষতা আপনা-আপনিই সৃষ্টি হয়—পরিস্থিতি তাকে দক্ষ করে তোলে।

উদাহরণ: আরবদের পারস্য বিজয়

এই প্রসঙ্গে আরবদের পারস্য বিজয়ের উদাহরণটি দেয়া যেতে পারে। পারস্য বিজয়ের সময় মহাবীর রুস্তমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে যখন নামিদামি সেনাপতি কাউকেই কাছে পেলেন না, তখন খলিফা ওমর সেনাপতি মনোনীত করলেন সাদ বিন আবু ওয়াক্কাসকে, যার যুদ্ধ পরিচালনায় কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। যুদ্ধক্ষেত্রে বিশাল পারস্যবাহিনী হাতি সামনে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। সেনাপতি রুস্তম একটা উঁচু জায়গায় হাতির পিঠে হাওদায় বসে দূর থেকে আরব বাহিনীর জীর্ণশীর্ণ অবস্থা দেখে হাসছেন—এ তো কিছুক্ষণের খোরাক!

আবু ওয়াক্কাস বুঝলেন, সরাসরি যুদ্ধে সুবিধা করা যাবে না। তিনি আত্মনিমগ্ন হলেন। বুদ্ধি বেরিয়ে এলো। তীরন্দাজ প্রধানকে নির্দেশ দিলেন—সামনের যে হাতিটাকে অনুসরণ করে দুপাশের হাতিগুলো বল্লমের ফলার মতো এগোচ্ছে—ওটার দুই চোখে তীর মারতে হবে। সবচেয়ে দক্ষ তীরন্দাজ দল অবস্থান নিলো। প্রশিক্ষিত হাতির পাল এগিয়ে আসছে, হাতির পেছনে লাখো সৈন্য। ৫০ হাতের মধ্যে আসার সাথে সাথে দুজন তীরন্দাজ দুটি তীর মারলেন। দুটিই গিয়ে বিঁধলো নেতা হাতির দুচোখে। তীর ঢোকার সাথে সাথে অন্ধ হয়ে হাতি পেছনে ঘুরে গেল। নেতা হাতিকে দিক পরিবর্তন করতে দেখে বাকি হাতিগুলোও পেছনে ঘুরে গেল।

আরব বাহিনীর পরিবর্তে পুরো পারস্য বাহিনী হাতির পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। বিপুল সংখ্যক সৈন্য হতাহত হলো। সেনাপতি রুস্তম হাতির হাওদা থেকে নেমে ঘোড়া নিয়ে পালাতে গিয়ে নিহত হলেন। জয়ী হলো আরবরা। অর্থাৎ তাদের সুসজ্জিত বিশাল বাহিনী না থাকলেও নৈতিক শক্তিতে যেহেতু তারা উজ্জীবিত ছিলেন, মস্তিষ্ককে ব্যবহার করে নতুন রণকৌশল অবলম্বনে অচিরেই তারা দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন এবং বিজয় তারাই পেয়েছেন। অবহেলিত পশ্চাদপদ জনপদের অখ্যাত মানুষরাই তখনকার দুই সুপারপাওয়ার রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটায়। পত্তন করে এক নতুন সভ্যতার।

অন্য উদাহরণ: লালফৌজের সংগ্রাম

গত শতাব্দিতে চেয়ারম্যান মাওয়ের নেতৃত্বে লালফৌজও একইভাবে ১৫ বছরের যুদ্ধে চিয়াং কাইশেকের বিশাল সুসজ্জিত বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে চীনে কম্যুনিজম প্রতিষ্ঠা করে। লালফৌজের সেনাপতিসহ সাধারণ সৈনিক-প্রচলিত অর্থে কারোরই কোনো সামরিক ট্রেনিং ছিল না। নৈতিক শক্তিই তাদের মধ্যে চিয়াং কাইশেককে হঠানোর প্রয়োজনীয় দক্ষতা সৃষ্টি করে।

নিউজটি শেয়ার করুন



এ জাতীয় আরো খবর..
ইউটিউবে আমরা...
ফেসবুকে আমরা...