দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনা সদস্যদের স্মরণে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত ‘ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি’তে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সাতটি দেশের শীর্ষ কূটনীতিকরা। বৃটিশ হাই কমিশনারের নেতৃত্বে তারা স্মরণসভায় অংশগ্রহণ করেন।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১১টায় তারা বুড়িচং উপজেলার ময়নামতির যুদ্ধ সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সেনাবাহিনীর চৌকস দলের বাজানো বিউগলের করুণ সুরে শোকাবহ আবহের সৃষ্টি হয়।
হলিক্রস পাদদেশে শ্রদ্ধা জানান বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুর, কানাডার হাই কমিশনার লিলি নিকোলস, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার কামার আব্বাস খোখার, ভারতীয় হাই কমিশনারের প্রতিনিধি ডিফেন্স এটাশে বিগ্রেডিয়ার এম এস সাবারওয়াল এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রতিনিধিসহ অন্যান্য কূটনীতিকরা। বাংলাদেশের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কুমিল্লা সেনানিবাসের ৩৩ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের প্রতিনিধি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রাব্বি আহসান এনডিসি,পিএসসি।
বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, ‘দিনটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন আমরা তাদের স্মরণ করছি।
কানাডার হাই কমিশনার লিলি নিকোলস বলেন, ‘এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজকে আমরা স্মরণ করছি সেসকল নারী-পুরুষকে যারা বিশ্বযুদ্ধে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমরা সমাধিস্থলটি ঘুরে দেখেছি। এখানে কানাডিয়ানসহ বৃটিশ, বাঙ্গালি, অষ্ট্রেলিয়ান, ইন্ডিয়ান, আফ্রিকানসহ অনেক দেশের ব্যক্তির সমাধি রয়েছে। তারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন আমাদের প্রজন্মের জন্য, যাতে আমরা শান্তিতে সমৃদ্ধিশীল একটি পৃথিবীতে বাস করতে পারি। আমরা তাদের কখনো ভুলবোনা।’
কূটনীতিকরা সমাধিস্থলে নিজ দেশের সেনা সদস্যদের সমাধিগুলো ঘুরে দেখেন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সমাধিস্থলের ক্রুশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করার পর নিহতদের স্মরণ করা হয় এবং কয়েক মুহূর্ত নীরবতা পালন করা হয়। এসময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
উল্লেখ্য, ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ৭৩৮ জন সেনাকে সমাহিত করা হয়েছিল। কিন্তু, ১৯৬২ সালে ১ জনের দেহাবশেষসহ সমাধির মাটি তার স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গেলে সেখানে বর্তমানে ৭৩৭ জনের সমাধি রয়েছে। কমনওয়েলথ গ্রেভ ইয়ার্ড কমিশন যুদ্ধ সমাধি ক্ষেত্রটি তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে। প্রতিবছর এসময়ে কমনওয়েলথ্ভুক্ত দেশগুলোর হাইকমিশনাররা সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে নিহতদের স্মরণ করেন। সে ধারাবাহিকতায় শুক্রবার তারা সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে যান।