অতি সাধারণ আবেদের জন্য শোকাচ্ছন্ন দেশ-বিদেশ!

মাল্টিনিউজ বিশেষ প্রতিবেদন

বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে গভীর শোকাচ্ছন্ন দেশ-বিদেশের অগুণিত মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও ভাসছে শোকের বন্যায়। গতকালই তার মৃত্যু সংবাদ জেনে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীসহ শোক প্রকাশ করেছে দেশের প্রায় সবকয়টি বড় রাজনৈতিক দল। দেশের একমাত্র নোবেলবিজয়ী থেকে শুরু করে বিশ্বের শীর্ষ ধনী বিল গেটস দম্পতিও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

রাষ্ট্রপতি শোকবার্তায় বলেন, ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিপুল অবদান রেখেছেন। দেশের উন্নয়নে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোকবার্তায় বলেন, ১৯৭১ সালে ফজলে হাসান আবেদ ইংল্যান্ড থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়, তহবিল সংগ্রহ ও জনমত গঠন করেন। সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনেও তিনি কাজ করেন। তার মতো মানবতাবাদি মানুষের মৃত্যুতে দেশ ও জাতির এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

ব্যক্তিগত জীবনে ড. ইউনুস ও ফজলে হাসান আবেদের মধ্যে ছিল চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। বন্ধুর না ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় শোকাচ্ছন্ন ড. ইউনুস নিজের ভেরিয়ফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘তুমি আমাদের চিরসাথী’ শিরোনামে লিখেন, এটা বললে বোধ হয় বাড়িয়ে বলা হবে না যে, বাংলাদেশের সতেরো কোটি মানুষের মধ্যে খুব কম মানুষই আছেন যিনি জীবনে কোনো না কোনোভাবে আবেদের কর্মকান্ডের সুফল ভোগ করেন নি। আর তিনি যদি হন বিশাল গ্রাম বাংলার দরিদ্রদের একজন, মহিলাদের একজন তাহলে তো তাকে জীবনের প্রতি পদক্ষেপে আবেদের সাক্ষাৎ পেতে হয়েছে – শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রোজগার, আত্মোপলদ্ধি, আরো অনেক কিছুতে। আমাদের অজান্তে যে-আবেদ আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী তাকে আমরা বিদায় জানাবো কীভাবে?

শোক প্রকাশের তালিকা থেকে বাদ যায়নি হাজারো দেশি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা। স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে মাল্টিনিউজ পরিবারও গভীরভাবে শোকাহত। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট তারিক চয়ন সান্নিধ্য পেয়েছিলেন সারা বিশ্বে সম্মানিত, বাংলাদেশের একমাত্র ‘নাইটহুড’ খেতাবপ্রাপ্ত ফজলে হাসান আবেদের। বিভিন্ন সময় তার সাথে সাক্ষাতের এবং আলাপচারিতার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, স্যার ফজলে হাসান আবেদ তার প্রিয়জনদের কাছে ‘আবেদ ভাই’ নামেই পরিচিত ছিলেন। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে তার চলে যাওয়াকে ‘মহীরুহ’ বা ‘বড় গাছ’ এর বিদায়ের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। একজন স্যার ফজলে হাসান আবেদ তার কর্মের মাধ্যমে মহীরুহ হলেও ব্যক্তি হিসেবে ছিলেন অতি সাধারণ। তিনি খুব কম কথা বললেও মুখে মৃদু হাসি লেগেই থাকতো৷ সবমিলিয়ে ছিলেন নিতান্তই একজন ভদ্রলোক।

এদিকে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এক শোক বার্তায় লিখেছে, ‘ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এনজিও ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের কর্মময় জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই স্যার আবেদ ও ব্র্যাক এর গর্বিত সহযোগী। দরিদ্রদের ক্ষমতায়নমুখী কার্যক্রম এবং অসমতা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে নিরলস লড়াইয়ের জন্য বিশ্বব্যাপী স্যার আবেদকে স্মরণ করা হবে।’

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.