মেট্রোরেলে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা, সর্বোচ্চ ৯০

চলতি বছরের ডিসেম্বরে চালু হতে পারে স্বপ্নের মেট্রোরেল। এতে যাতায়াত ভাড়া নিয়ে রাজধানীবাসীর কৌতূহলের শেষ নেই। অবশেষে মেট্রোরেলের প্রাথমিক ভাড়া ঠিক করেছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এ সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি এ ভাড়ার হার ঠিক করেছে।

ডিটিসিএ’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- কোনো যাত্রীকে মেট্রোরেলে চড়লেই সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া গুনতে হবে। রাজধানীতে মেট্রোরেলের মোট দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। পুরো এ পথ কেউ যদি মেট্রোরেলে পাড়ি দিতে চান, তবে তাকে গুনতে হবে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা ভাড়া।

তবে ডিটিসিএ’র এ ভাড়ার হার চূড়ান্ত নয়। সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বাধীন কমিটির ভাড়ার প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। এরপর এ ভাড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাড়া ঠিক হবে।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নীলিমা আখতার বলেন, ‘ভাড়া চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয়নি, এটা প্রস্তাব করা হয়েছে। মেট্রোরেলে চড়লেই সর্বনিম্ন ২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৯০ টাকা প্রস্তাব করা হচ্ছে। আমি বলবো- এটা অনেক কম। কারণ এসি বাসে চড়লে এর থেকে অনেক বেশি ভাড়া লাগে। সেই তুলনায় ভাড়া অনেক কম। তারপরও এটা প্রস্তাবমাত্র। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। তিনি চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে এটা কার্যকর হবে।’

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খরচ, জনবলের বেতন-ভাতা এবং কোচ ও অন্যান্য স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ খরচের কথা বিবেচনা করেই এটা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মানুষের ক্রয়-ক্ষমতাসহ সার্বিক বিষয় চিন্তা করে এটা করা হচ্ছে। সামগ্রিক বিষয় মিলিয়ে এটা করা হয়েছে। একটা সাধারণ বাসে অনেক টাকা ভাড়া লাগে। মানুষের সামর্থ্য, পরিচালন ব্যয় ও আর্থিক সামর্থ্যের কথা বিবেচনা করেই এ ভাড়া ঠিক করা হয়েছে।’

স্টেইনলেস স্টিল বডির ট্রেনগুলোয় থাকবে লম্বালম্বি শিট। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে দুটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি বগির দুই পাশে থাকবে চারটি করে দরজা। জাপানি স্ট্যান্ডার্ডের নিরাপত্তা ব্যবস্থাযুক্ত প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে এক হাজার ৭৩৮ জন। ভাড়া পরিশোধের জন্য থাকবে স্মার্ট কার্ড টিকিটিং ব্যবস্থা। মেট্রোরেলে ২৪টি ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় আপ ও ডাউন রুটে ৬০ হাজার যাত্রী আনা-নেওয়া করতে সক্ষম হবে। ইতোমধেই অর্ধেক কোচ জাপান থেকে দেশে এসেছে।

প্রাথমিকভাবে মেট্রোরেলের জন্য প্রতি কিলোমিটারে প্রায় চার টাকা ভাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। মেট্রোরেলে দুই ধরনের টিকিটের ব্যবস্থা থাকবে। একটা হচ্ছে স্থায়ী কার্ড। অর্থাৎ এ কার্ড রিচার্জ করে পুরো বছর বা মাসে যাতায়াত করা যাবে। এ কার্ড কিনতে ২০০ টাকা দিতে হবে। এরপর ২০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করা যাবে। অনলাইন লেনদেনের মাধ্যমে কার্ড রিচার্জ করা যাবে। আরেকটি কার্ড সাময়িক, যা প্রতি যাত্রায় দেওয়া হবে।

যানজট থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে দ্রুত এগিয়ে চলছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। এ প্রকল্পের উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশের কাজ বলতে গেলে শেষ। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে এ অংশে মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করা হবে। কাজ চলছে প্রকল্পের বাকি অংশেও।

প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলমান প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে অনুমোদিত ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। তবে মতিঝিল ছাড়িয়ে মেট্রোরেলের রুট কমলাপুর পর্যন্ত নেওয়ায় প্রকল্পের কাজ বেড়ে গেছে। সেজন্য পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে আরও প্রায় এক বছর বেশি সময় লাগবে।

সেক্ষেত্রে মেট্রোরেল প্রকল্পটি শেষ করতে সময় লাগবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর খরচ হবে আরও ১১ হাজার কোটি টাকা। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এরমধ্যে জাইকার ঋণ থেকে ১৯ হাজার ৬৭৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। সরকারি তহবিল থেকে ১৩ হাজার ৭৯৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

মার্চ পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৭৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ভৌত কাজের অগ্রগতি ৯১ দশমিক ৪১ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অগ্রগতি ৭৭ শতাংশ।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.