৪৯ বছর ক্ষমতায় থাকা ওমানী সুলতান কাবুস, কি তার কাহিনী?

ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাইদ আল সাইদের মৃত্যুতে ১৩ জানুয়ারি দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে বাংলাদেশ। তাকে বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু বলে মনে করা হয়। সেদিন দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং দেশের বাইরে অবস্থিত বাংলাদেশী মিশনগুলোকেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছিল।
এছাড়া দেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয় এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তাঁর আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।

গত ১০ জানুয়ারি মারা যান সুলতান কাবুস বিন সাইদ আল সাইদ। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন সুলতান কাবুস। গত কয়েক বছর ধরে তিনি কোলন ক্যান্সারে ভুগছিলেন। কিন্তু ওমান কখনো তার শারীরিক অসুস্থতার খবর প্রকাশ করেনি। গত মাসেই তিনি বেলজিয়ামে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি জার্মানির একটি হাসপাতালে আট মাস কাটিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। দেশটির ‘রয়াল কোর্ট’ তখন বিস্তারিত না বলে শুধু এটাই বলেছিল যে চিকিৎসা সফল হয়েছে।

দেশটির সরকারি টেলিভিশন নিয়মিত অনুষ্ঠান সম্প্রচার স্থগিত রেখে গত শুক্রবার তাঁর প্রয়াণের কথা ঘোষণা করে। তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হয় ওমানে। সেই সাথে টানা ৪০ দিন দেশটির জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হচ্ছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

১৯৪০ সালে জন্ম নেয়া কাবুস আরব বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের শাসক ছিলেন। তিনি আল সাইদ রাজবংশের ১৪তম প্রজন্ম। ১৯৭০ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে নিজ পিতার কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর প্রায় অর্ধ শতক ওমান শাসন করেন।

সুলতান কাবুস ব্রিটিশদের সহায়তায় একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে তাঁর পিতা সাইদ বিন তাইমুরকে ক্ষমতা থেকে পদচ্যুত করেন। ওমানের তেল সম্পদ ব্যবহার করে ওমানের উন্নতি ত্বরান্বিত করেন। ব্রিটিশদের সহায়তায় অল্প কয়েক বছরেই তিনি দ্রুত দেশটিকে উন্নতির পথে নিয়ে যান।

তার পিতা তাইমুরের শাসনামলে ওমান একপ্রকার মধ্যযুগীয় কায়দায় শাসিত হচ্ছিল। দাসপ্রথা বৈধ ছিল, কেউ বিদেশে যেতে পারতো না, গানবাজনা নিষিদ্ধ ছিল।

কাবুস ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়েছিলেন। ১৯৬৪ সালে দেখে ফিরে দেখেন তিনি কার্যত গৃহবন্দী।

সুলতান কাবুস যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন ওমান আজকের মতো ধনী দেশ ছিল না। বরং দরিদ্র দেশ হিসেবেই পরিচিত ছিল বিশ্বের কাছে। কাবুস ক্ষমতা গহণ করেই দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন এবং ওমানকে ধনী দেশে পরিণত করেন। প্রায় ৫০ বছর ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ওমানে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

বেশ কয়েক বছর ধরে সুলতান কাবুস মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক বিভিন্ন মতবিরোধ নিরসনে উদ্যোগী ছিলেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংকট নিরসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন।

তিনি দক্ষতার সাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কে দারুণ ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছিলেন।

সুলতান কাবুস মত্যুকালে অবিবাহিত ছিলেন এবং প্রকাশ্যে ক্ষমতার কোনো উত্তরাধিকারও রেখে যাননি। তার মৃত্যুর পর ওমানের নতুন সুলতান হিসেবে তার চাচাতো ভাই এবং দেশটির সংস্কৃতিমন্ত্রী হাইতাম বিন তারিক আল সাঈদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

ওমানের আয়তন ৩ লাখ ৯ হাজার বর্গ কিলোমিটার। আর জনসংখ্যা ৪৬ লাখের কিছু বেশি, যাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই বিদেশি নাগরিক। সুলতান কাবুসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে বিরোধী দলমতের কণ্ঠরোধের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.