সেতুর আলোয় রাতের পদ্মা

টানা ১০ দিন ধাপে ধাপে পরীক্ষার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পদ্মা সেতুর সব বাতি একযোগে জ্বালানো হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ ও জাজিরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সরবরাহ করা বিদ্যুতে আলো দেয় সেতুতে থাকা ৪১৫টি বাতি। প্রথমে বিকেল ৫টা ৩৪ মিনিটে মাওয়া প্রান্তে ২০৫টি বাতি জ্বালানো হয়। এর ২০ মিনিট পর জাজিরা প্রান্তের ২১০টি বাতি জ্বলে ওঠে।

পদ্মা সেতুর বাতিগুলো প্রথমবারের মতো একযোগে জ্বলে উঠলে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে পদ্মাপারের মানুষ। তারা নদীর পার থেকে বাতির আলো ছড়ানোর দৃশ্য উপভোগ করে। নৌ রুটে ফেরির যাত্রীরাও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেতুর ওপর বাতির দিকে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘সেতুর ল্যাম্পপোস্টে বাতিগুলো সেট করার পর ধাপে ধাপে পরীক্ষা চালানো হয়। আজ একযোগে পরীক্ষার জন্য সব বাতি জ্বালানো হয়েছে। বাতিগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে কি না এখন তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। ’

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ৪ জুন থেকে শুরু করে গত শুক্রবার সেতুর ৪১৫টি বাতির সফল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ল্যাম্পপোস্ট ও বাতিগুলোকে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগের বাতাসও কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। দিনের বেলায় মেঘলা আকাশ বা ঘন কুয়াশায় আলোর স্বল্পতা তৈরি হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিগুলো জ্বলবে।

এদিকে আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে পদ্মার দুই পারে ম্যুরাল, নামফলক, ইলিশ ভাস্কর্যসহ নানা রকমের সাজসজ্জাও চূড়ান্ত। সেতুতে থিম সং করছেন দেশবরেণ্য শিল্পীরা। এরই মধ্যে এই থিম সংয়ের শুটিংও হয়েছে সেতুর ওপর।
উদ্বোধনের প্রস্তুতি দেখে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস বইছে পদ্মাপার ও আশপাশের মানুষের মনে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিবর্তনসহ ভাগ্য বদলে দেবে এই সেতু। সেতু চালুর সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-খুলনার পুরো সুফল পাবে দেশের সাধারণ মানুষ। সেতুতে রাখা হয়েছে নতুন ব্রডগেজ রেললাইন, গ্যাস সঞ্চালন লাইন, ফাইবার অপটিক্যাল ও টেলিফোন ডাক্ট।

সেতুর নিরাপদ দূরত্বে তৈরি হয়েছে হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাইন। সেতুটি উদ্বোধনের পরই পরিবহন আর কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তনের আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পুরো অঞ্চলে কৃষি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক পরিবর্তন হবে। উদ্যোক্তারা এরই মধ্যে বিনিয়োগ বাড়িয়েছিলেন, যাতে করে সেতু উদ্বোধনের পরপরই এর সুফল পাওয়া যায়।

পদ্মা সেতুর এক প্রান্ত মুন্সীগঞ্জের মাওয়া আর অন্য প্রান্ত শরীয়তপুরের জাজিরা। শরীয়তপুর থেকে এই প্রথম ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হচ্ছে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা পরিবহন সেক্টরে বিনিয়োগ করছেন। পদ্মার দুই পারের মানুষই খুব খুশি। সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে এখানে সবার মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এখন যেকোনো প্রয়োজনে সহজেই স্বল্প সময়ে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে পারবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.