শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবিতে মৃত্যু বেড়ে ৩৪

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে মালবাহী কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় মঙ্গলবার আরও পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এই দুর্ঘটনায় ৩৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হলো।

স্থানীয়রা জানান, লঞ্চডুবিতে নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনরা নদীর পাড়ে অবস্থান করছিলেন। সকাল থেকে তারা ও স্থানীয়রা আরও পাঁচটি মৃতদেহ নদীতে ভেসে উঠতে দেখে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের খবর দেন। তারা এসে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করেন।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল-আরেফিন জানান, মৃতদেহগুলো অনেকটাই বিকৃত হয়ে গেছে। পরিচয় নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে।

এর আগে সোমবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’র সহায়তায় উল্টো করে লঞ্চটি নদীর পূর্বপারে আনা হয়। এরপরই লঞ্চটির ভেতর থেকে ২৪টি মৃতদেহ বের করে আনা হয়েছে।

লঞ্চডুবির ঘটনায় নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে তার হলেন- মুন্সীগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকার দোলা বেগম (৩৪), সদরের রুনা আক্তার (২৪), মোল্লাকান্দির সোলেমান বেপারী (৬০), তার স্ত্রী বেবী বেগম (৬০), মালপাড়ার সুনিতা সাহা (৪০), তার ছেলে বিকাশ সাহা (২২), উত্তর চরমসুরার পখিনা (৪৫), একই এলাকার বীথি (১৮), তার এক বছর বয়সী মেয়ে আরিফা, সদরের প্রতিমা শর্মা (৫৩), সাদিয়া আক্তার (১১), মোল্লাকান্দি চরকিশোরগঞ্জের মো. শামসুদ্দিন (৯০), তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫), দক্ষিণ কেওয়ারের নারায়ণ দাস (৬৫), তার স্ত্রী পার্বতী দাস (৪৫), সদরের শাহ আলম মৃধা (৫৫), একই এলাকার মহারানী (৩৭), ছাউদা আক্তার লতা (১৮), খাদিজা বেগম (৫০), বরিশালের উটরা উজিরপুরের হাফিজুর রহমান (২৪), তার স্ত্রী তাহমিনা (২০), তাদের এক বছর বয়সী শিশুপুত্র আবদুল্লাহ, নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কল্যান্দী এলাকার দুই বছরের শিশু আজমির (ঘটনার সময় সঙ্গে থাকা দাদা সাইফুল ইসলাম বেঁচে গেছেন), ঢাকার শনিরআখড়ার আনোয়ার হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৩০), তাদের ৭ মাস বয়সী মেয়ে মানসুরা, শরীয়তপুরের নড়িয়ার আবদুল খালেক (৭০), ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার মোছা. জিবু (১৩) ও নারায়ণগঞ্জের বন্দরের সেলসারদীর মো. নয়ন (১৯)।

রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জ এলাকায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর সামনে কার্গোর ধাক্কায় ডুবে যায় লঞ্চটি। এমভি রাবিতা আল হাসান নামে লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল থেকে ৫টা ৫৬ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

ঘটনার সময় নদীর তীর থেকে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এসকে-৩ নামে একটি কার্গো জাহাজ বেপরোয়া গতিতে লঞ্চের পেছন দিকে সজোরো ধাক্কা দিলে সেটি ডুবে যায়। ঘটনার পর লঞ্চে থাকা বেশ কিছু যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

ওই সময় নদীর ঘাট থেকে বেশ কিছু নৌকা ও ট্রলার গিয়ে ২৫-৩০ জনকে উদ্ধার করে। দুর্ঘটনার পরপর ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ায় তাৎক্ষণিক উদ্ধার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেখানে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে।

লঞ্চের যাত্রী দিপু বলেন, তিনি তার মা মহারানীকে মুন্সীগঞ্জে পৌঁছে দিতে লঞ্চে করে যাচ্ছিলেন। লঞ্চটি নির্মাণাধীন শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছাকাছি যাওয়ার পর পেছন থেকে এসকে-৩ নামে কার্গো জাহাজটি লঞ্চ বরাবর দ্রুত গতিতে আসতে থাকে। ওই সময় লঞ্চের পেছনে থাকা যাত্রীরা হাত নেড়ে লঞ্চ বরাবর না এসে পাশ দিয়ে যেতে ইশারা করেন। কিন্তু কার্গো থেকে লঞ্চটিকে সরে যেতে বলা হয়। এরপর কিছু বুঝে উঠার আগেই কার্গো জাহাজটি লঞ্চের পেছনে এসে সজোরা ধাক্কা দিলে সেটি ডুবে যায়।

বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জের উপ-পরিচালক (বন্দর) মোবারক হোসেন বলেন, টার্মিনাল ছেড়ে যাওয়ার আগে টার্মিনালের ভয়েজ অব ডিক্লারেশন অনুযায়ী ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে অর্ধশত যাত্রী ছিলেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.