‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বন্ধে আইনি নোটিশ

ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত এবং ইসলাম ধর্মের অপমানের অভিযোগ তুলে পহেলা বৈশাখে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বন্ধ করতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। রবিবার রেজিস্ট্রি ডাকে নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান। সংস্কৃতি, ধর্ম, স্বরাষ্ট্রসচিব ছাড়াও ঢাকার জেলা প্রশাসক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিনকে এ নোটিশ পাঠান তিনি।

বাংলা বর্ষবরণ উৎসবের নান্দনিক এই আয়োজনকে অসাংবিধানিক, বেআইনি উল্লেখ করে অবিলম্বে তা বন্ধের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। নইলে সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করে হাইকোর্টে রিট করার কথা বলা হয়েছে নোটিশে। এক প্রশ্নে আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘পহেলা বৈশাখের আর কয়েক দিন মাত্র বাকি। এবারও মঙ্গল শোভাযাত্র করার আয়োজন চলছে। তাই এ আয়োজন বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নোটিশটি পাঠিয়েছি।’

বাংলা নববর্ষের দিন সারা দেশেই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনটাই মূল। এটি বন্ধ হলে সারা দেশে এ আয়োজন বন্ধ হবে বলে মনে করেন সর্বোচ্চ আদালতের এই আইনজীবী।

নোটিশে বলা হয়েছে, ‘পহেলা বৈশাখ’ বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হাজার বছর ধরে, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বাঙালি জনগণ একে অপরের ধর্মকে সম্মান করে এই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে আসছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে একটি কৃত্রিম কার্যকলাপ বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত, এই কৃত্রিম উদ্ভাবিত মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে পহেলা বৈশাখের কোনো সম্পর্ক নেই।’

নোটিশে উইকিপিডিয়ার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘১৯৮৯ সালে পহেলা বৈশাখে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে এক ধরনের পদযাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে এই আনন্দ শোভাযাত্রাকে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ করা হয়েছে।’ নোটিশে আরো বলা হয়েছে, ‘মঙ্গল শব্দটি একটি ধর্মীয় শব্দ। সব ধর্মের লোকজন তাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে মঙ্গল প্রার্থনা করে থাকেন। এখন এই মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের দৈত্য আকৃতির পাখি, মাছ ও বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য প্রদর্শনের মাধ্যমে মুসলিম জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশ সংবিধানের ২ (ক) অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন। শুধু তাই না, ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাতের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মকে অপমান করা হচ্ছে, যা দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

নোটিশে দাবি করা হয়েছে, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙালি সংস্কৃতির কোনো অংশ নয়। এটা সম্পূর্ণ কৃত্রিম উদ্ভাবন। মূলত দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য এবং দেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যেই এই মঙ্গল শোভাযাত্রা নামক কৃত্রিম কার্যকলাপের উদ্ভাবন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা এ বছর ৩৪ বছরে পা রাখছে। ১৯৮৯ সালে চারুকলা থেকে এই শোভাযাত্রার শুরু। বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় ২০১৬ সালে। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কারণ হিসেবে ইউনেসকো বলেছিল- এই শোভাযাত্রা অশুভকে দূর করা, সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতীক। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালির ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতিগত সব ধরনের বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত হয়।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.