ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে অন্য চিন্তা

ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিকল্প চিন্তা করছে সরকার। পাম অয়েলের পরিবর্তে সূর্যমুখী, সরিষা, রাইস বার্ন অয়েল, ক্যানোলাসহ অন্যান্য তেল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এগুলো আমদানিতে ব্যয় যাতে কম পড়ে সেজন্য কর কাঠামোও কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়া গত শনিবার পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। এতেই দেশের বাজারসহ আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম।

কেননা ইন্দোনেশিয়া থেকে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি পাম অয়েল রপ্তানি হয়। এর পরেই রয়েছে মালয়েশিয়ার অবস্থান। দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদার ৬৭ শতাংশই পাম অয়েল দিয়ে মেটানো হয়। এ জন্য পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ করায় দেশের বাজারে তেলের দাম অস্থির হয়ে উঠেছে।

এদিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে জানানো হয় গত শনিবারের ঘোষণার একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবার। এতে তারা জানিয়েছে, পরিশোধিত পাম অয়েল ও আংশিক পরিশোধিত পাম অয়েল রপ্তানি অব্যাহত থাকবে। শুধু অপরিশোধিত পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ থাকবে।

ইন্দোনেশিয়া থেকে ওই তিন ধরনের পাম অয়েলের পাশাপাশি পাম গাছের ফলও তারা রপ্তানি করে। নতুন ঘোষণার ফলে এখন তারা পাম ফল ও অপরিশোধিত পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ থাকবে।

বুধবার রাতে অপর এক ঘোষণায় ইন্দোনেশিয়া জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ থাকবে। এদিকে বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে ১৬ লাখ টন অপরিশোধিত পাম অয়েল আমদানি করে। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে ৯ লাখ টনের বেশি, বাকি ৭ লাখ টন অন্যান্য দেশ থেকে।

বাংলাদেশ পরিশোধিত পাম অয়েল আমদানি করে না। অপরিশোধিত পাম অয়েল এনে দেশে সেগুলো পরিশোধন করে খাদ্য ও শিল্প খাতে জোগান দেওয়া হয়। এখন অপরিশোধিত পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশকে আংশিক পরিশোধিত বা পরিশোধিতটা আমদানি করতে হবে। এতে খরচ বাড়বে।

এছাড়া দেশের তেল পরিশোধন কারখানাগুলো অপরিশোধন থেকে পরিশোধন করার প্রযুক্তি নিয়ে গড়ে উঠেছে। এ অবস্থায় আংশিক পরিশোধিত পাম অয়েল আমদানি করে সেগুলো পরিশোধন করতে গেলে কারখানার একটি ইউনিটকে অকেজো রাখতে হবে। ফলে খরচ আরও বাড়বে। পরিশোধিত পাম অয়েল এনে বাজারে চাহিদা মেটাতে গেলে সয়াবিন তেলের মতোই খরচ পড়বে।

এসব বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিকল্প হিসাবে দেশে উৎপাদিত সরিষা থেকে তেল উৎপাদন করে বাজারে ছাড়া। এছাড়া রাইস বার্ন অয়েল দেশে উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

এর উৎপাদন বাড়িয়ে বাজারে ছাড়া। এসব তেলের পাশাপাশি সূর্যমুখী তেল বিদেশ থেকে আমদানি করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেননা বর্তমানে সয়াবিন তেলের কাছাকাছি দরেই এসব তেল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

বিদেশ থেকেও আমদানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভোজ্যতেলের ওপর যে করকাঠামো রয়েছে সেগুলো কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে দেড় হাজার টন পাম অয়েল আমদানি এখনো অনিষ্পন্ন রয়েছে। এগুলো আমদানি করার জন্য উদ্যোক্তাদের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে। এছাড়া সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.