বিদেশ যাচ্ছে মেহেরপুরের বাঁধাকপি

বাঁধাকপি চাষ করে মেহেরপুরের চাষিদের ভাগ্যের চাকা খুলছে। এখানে উৎপাদিত বাঁধাকপি রপ্তানি হচ্ছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে ও বিদেশে বিষমুক্ত সবজির চাহিদা রয়েছে। এসব সবজি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখছে মেহেরপুর। এ জেলায় সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়। সহনীয় মাত্রায় কীটনাশকের ব্যবহার ও নিরাপদ সবজি বাঁধাকপি চাষ করছেন মেহেরপুরের কৃষক। নিরাপদ সবজি হিসেবে চলতি মৌসুমে এক হাজার মেট্রিক টন বাঁধাকপি সরবরাহ করা হবে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে। গত সপ্তাহ থেকে কপি সংগ্রহ শুরু করছেন রপ্তানিকারকরা।

এগ্রো ফ্রেশ নামের একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় মাঠ থেকে বাঁধাকপি সংগ্রহ করছেন। ক্ষেত থেকে সাদা কাগজে মুড়িয়ে বস্তাভর্তি করে রপ্তানি উপযোগী করা হচ্ছে। মাঠ থেকে বাঁধাকপি বিক্রি করে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষক। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩৫ থেক ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হচ্ছ বলে জানিয়েছেন চুক্তিবদ্ধ বেশ কয়েকজন কৃষক।

গাংনীর কোদাইলকাটি গ্রামের কৃষক আজগর আলী বলেন, ‘কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনায়
বাঁধাকপি ক্ষেত থেকে সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কপি কাটার পর সাদা কাগজে জড়িয়ে নেট বস্তায় ভর্তি করা হয়।’

আজগর আলী নামে এক কৃষক বলেন, ‘প্রতি বছরেই শীতকালের সবজি চাষে আমাদের লোকসান হয়। সবজি বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে ভালো লাভ হবে।’

মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের সবজি চাষি ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘দেড় বিঘা জমিতে বাঁধাকপির চাষ করতে ৩৫ হাজার ৬১৫ টাকা খরচ হয়। মেহেরপুরের বাজারে বাঁধাকপির দাম পড়ে যাওয়ায় অনেক চাষি হতশায় ভুগছিলেন। শ্রমিকের দাম না পাওয়ায় অনেকে বাঁধাকপির খেত গোবাদী পশু দিয়ে খাইয়ে দিচ্ছিলো। তখন তিনটি দেশে বাঁধাকপি রপ্তানির জন্য এসেছে এগ্রো ফ্রেশ, অ্যাটোমন ফুড নামের দেশের কয়েকটি কোম্পানি।’

তিনি জানান, ৯ হাজার বাঁধাকপি প্রতিটি ২ টাকা দরে ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেন অ্যাটোমন ফুড কোম্পানির কাছে। এতে তার ক্ষতি অর্ধেক কমে এসেছে।

এগ্রো ফ্রেশের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার রুবেল আহমেদ জানান, এ বছরে গাংনী উপজেলায় তাদের কোম্পানির চুক্তিবদ্ধ ৪৫ জন কৃষকের ৭৫ একর জমি থেকে নিরাপদ উপায়ে চাষ করা হয়েছে বাঁধাকপি। জমিতে চারা রোপনের পর থেকে কপি সংগ্রহ করা পর্যন্ত নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে রপ্তানি উপযোগী করা হয়। এ বছর রপ্তানিতে বেশ চাহিদা আছে। গত বছর মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে রপ্তানি করা হয়েছিলো। এ বছর নতুন দেশ হিসেবে তাইওয়ানেও বাঁধাকপি যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৬০০ টন বাঁধাকপি রপ্তানি করা হয়েছে। এখনও ৫০০ টনের চাহিদা রয়েছে। তাই নিবন্ধিত চাষি ছাড়াও অন্যান্য নিরাপদ সবজি চাষির থেকে বাঁধাকপি নেওয়া হচ্ছে। আগামী বছর আরও অনেক বেশি সবজি রপ্তানি করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, ‘কৃষি বিভাগ সব সময়ই নিরাপদ সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। নিরাপদ সবজির বাজার তৈরি করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এ বছর মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে নিরাপদ সবজি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে বাঁধাকপি রপ্তানি করা হচ্ছে। নতুন নতুন দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে বাংলাদেশের নিরাপদ সবজির চাহিদা। কোনোভাবেই যেন এ সুযোগ হাতছাড়া না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.