বাবার ইচ্ছায় ১ টাকায় চিকিৎসা দেন সুমাইয়া!

মাত্র এক টাকা ভিজিটে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন রাজশাহীর একজন চিকিৎসক। তার নাম সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল। ২০২০ সালে এমবিবিএস পাস করা এই চিকিৎসক বাবার ইচ্ছায় রোববার (৮ জানুয়ারি) থেকে এক টাকা ভিজিটে রোগী দেখছেন। এভাবে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে তিনি খুশি।

ডা. সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেলের বাবা মীর মোজাম্মেল আলী রাজশাহী নগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান সরকারি কলেজের প্রভাষক। তার চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে তিন মেয়েই চিকিৎসক। আর ছেলে প্রকৌশলী। নিজে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মীর মোজাম্মেল। তা পূরণ না হলেও মেয়েদের চিকিৎসক বানিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি।

মীর মোজাম্মেলের বাড়ি রাজশাহী নগরীর সাহেববাজারে। বাড়ির নিচতলায় রয়েছে দোকানপাট। ‘শিবগঞ্জ সুইটস’ নামে মিষ্টির দোকান তাদের পারিবারিক ব্যবসা। এরপাশের কক্ষে মেয়েকে চেম্বার করে দিয়েছেন মোজাম্মেল। রোববার থেকে মেয়ে এখানে বসছেন।

এ দিন মীর মোজাম্মেল আলী পোস্টার ছাপিয়ে চেম্বারের সামনে সাঁটিয়ে দিয়েছেন। এতে লেখা, ‘মাত্র এক টাকা ভিজিটে রোগী দেখা হয়।’ বিষয়টি সবাইকে জানান দিতে ডা. সুমাইয়া এই পোস্টারের একটি ছবি নিজের ফেসবুকে পোস্ট দেন। এতে লেখেন ‘আব্বুর জনসেবার ছোট্ট একটা ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা।’ এরপর সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

রাজশাহীর বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে ২০২০ সালে এমবিবিএস পাস করেছেন সুমাইয়া। তার স্বামী আবদুর রহিম বিশ্বাসও চিকিৎসক। সুমাইয়া বেসরকারি ক্লিনিকে রোগী দেখেন ১০০ টাকা ভিজিটে। আর বাবার করে দেওয়া চেম্বারে নিচ্ছেন এক টাকা। এই চেম্বারে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রোগী দেখছেন ডা. সুমাইয়া।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চেম্বারে গিয়ে রোগীদের সঙ্গে তাকে ব্যস্ত দেখা গেল। রোগীর সব কথা শুনে তারপরই ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছিলেন তিনি। তার টেবিলে রাখা ছিল মাটির ব্যাংক। সেখানেই রোগীরা এক টাকার একটি কয়েন ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন। ডা. সুমাইয়া জানান, তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেন। ব্যাংকে যে টাকা জমা হবে, তা ওই সংগঠনের মাধ্যমে জনসেবামূলক কাজে খরচ করা হবে।

ডা. সুমাইয়া বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে আমার বাবা আমাদের তিন বোনকে ডাক্তার বানিয়েছেন। বাবার স্বপ্ন আমরা জনসেবা করবো। তিনিই অনুরোধ করেন, বিনা পয়সায় মানুষকে সেবার দেওয়ার জন্য। বিনা পয়সায় হয়তো রোগীরা ইতস্তত বোধ করবেন। সেই জন্য এক টাকা ভিজিট। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আমি খুশি। যত দিন বেঁচে থাকবো, এটা করে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।’

তিনি জানান, তার অন্য দুই বোন এখন গর্ভবতী। সন্তান প্রসবের পর তারাও এ চেম্বারে বসবেন। তার মতো অন্য দুই বোনও এক টাকায় সেবা দেবেন।

ডা. সুমাইয়ার কাছে মেয়েকে নিয়ে নগরীর সপুরা থেকে এসেছিলেন সুকৃতি গোস্বামী। তিনি বলেন, ‘আমরা ফেসবুকে দেখে আজ এখানে এলাম। আমার খুব ভালো লেগেছে। যারা ডাক্তার, তারা এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারেন। এতে তাদের অভিজ্ঞতা বাড়বে, রোগীরাও সেবা পাবে।’

নগরীর সিপাইপাড়া এলাকার বুলবুল ইসলামও সেবা নেন। তিনি বলেন, ‘এক টাকায় সেবা দেওয়ার এ উদ্যোগ রাজশাহীতে এবারই প্রথম। দেখে এলাম সেবা কেমন। ডাক্তারের কথাবার্তা ভালো, চিকিৎসাও ভালো। ভালো পরামর্শ দিচ্ছেন। আমার সত্যিই খুব ভালো লেগেছে।’

ডা. সুমাইয়ার বাবা মীর মোজাম্মেল আলী বলেন, ‘আমার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়া। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। কিন্তু আমার তিন মেয়ে চিকিৎসক হয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে। আমার কথায় তারা সবাই এক টাকা ভিজিটে রোগী দেখতে রাজি হয়েছে। একজন ইতোমধ্যে শুরু করেছে। আমি চাই, জনগণ সেবা পাক। যাদের কথা কেউ ভাবে না, আমার মেয়েরা তাদের কথা ভাবছে। এটা আমার ভালো লাগছে। আশা করছি, আমার মেয়েরা জনগণকে সেবা দিয়ে যাবে।’

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.