বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন

হৃদরোগ চিকিৎসায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। হার্টের রিং পরানো, বাইপাস সার্জারি, পেস মেকার স্থাপনসহ হৃদযন্ত্রের প্রায় সব চিকিৎসা দেশে আগে থেকেই করা গেলেও বাকি ছিল কৃত্রিম হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন। এবার সেটিও করে দেখালেন বাংলাদেশি চিকিৎসকরা।

রাজধানীর বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে ৪২ বছর বয়সী এক নারীর দেহে কৃত্রিম হৃদপিণ্ড সফলভাবে প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়ে হৃদরোগ চিকিৎসার নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ।

গত বুধবার প্রতিষ্ঠানটির কার্ডিয়াক সার্জন অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের নেতৃত্বে এক দল চিকিৎসক সফল এ কৃত্রিম হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করেন। প্রায় চার ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে হার্টমেট-৩ নামে একটি মেকানিক্যাল হার্ট রোগী হৃদপিণ্ডের বাম নিলয়ে স্থাপন করে। পরে রোগীর হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ইউনাইটেড হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ হার্ট ফেইলিওর। এ ধরনের মৃত্যু রোধে দেশে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন হবে- এটি আমাদের স্বপ্ন ছিল। এ জন্য গত ১৪ থেকে ১৫ বছর ধরে চেষ্টা করে গেছি। এমনও হয়েছে, হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন; কিন্তু নির্ধারিত দিন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ জন্য সফল হওয়া যাচ্ছিল না। ৪২ বছর বয়সী নারী রোগীর কৃত্রিম হৃদপিণ্ড প্রতিস্থানের মধ্য দিয়ে আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হল। এর মধ্য দিয়ে হৃদরোগ চিকিৎসায় নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ।

হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন চিকিৎসার পেছনে রোগী ও তার পরিবারের ভূমিকার কথা তুলে ধরে ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সফলতার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন রোগী ও তার পরিবারের সদস্যরা। তারা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছিলেন। ইউনাইটেড হাসপাতালের আগে এ রোগী সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও তুরস্কে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে এলেও হার্টের অবস্থার উন্নতি হয়নি। পরবর্তীকালে আমাদের কাছে এলে তাতে কৃত্রিম হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে রোগী ও তার পরিবারের সদস্যরা সম্মতি দেন। এরপর হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। আমাদের ওপর আস্থা রাখায় রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

কৃত্রিম হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন ব্যয়বহুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন যন্ত্রটির মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। কৃত্রিম হার্টটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি ও অস্ত্রোপচার সবমিলে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকার মতো ব্যয় হতে পারে। মানুষের দোরগোরায় এই চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার সদিচ্ছা আমাদের আছে। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসতে পারেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে উন্নত বিশ্বের হার্ট ফেইলিওরের একমাত্র চিকিৎসা আরেকটি সুস্থ হার্ট প্রতিস্থাপন। তবে সুস্থ হার্ট পাওয়া না গেলে অথবা পেতে বিলম্ব হলে মেকানিক্যাল হার্ট প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে করে রোগীর হৃদপিণ্ড কিছুটা বিশ্রাম পায় এবং শরীরের রক্ত চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। এছাড়া শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিডনি, লিভার সুস্থতা পায়। তীব্র হার্ট ফেইলিওরে আক্রান্ত কিছু রোগীর হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের উপযুক্ত না হলে বিকল্প উপায় মেকানিক্যাল হার্ট স্থাপন। এতে ওই রোগী সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের ১০ মিলিয়ন মানুষ এ জটিল রোগে আক্রান্ত। এশিয়া অঞ্চলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব এক দশমিক ২৬ শতাংশ থেকে ছয় দশমিক সাত শতাংশ।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.