বজ্রপাত আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সতর্কবাণী

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

বজ্রপাতের প্রচণ্ড গর্জন এবং আলোর ঝলকানি মহান আল্লাহতায়ালার মহাশক্তির বহিঃপ্রকাশ। বজ্রপাতের গর্জন ও আলোর ঝলকানি মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ সতর্কবাণী।

বজ্রপাত আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাবধান করার জন্য বর্ষণ করে থাকেন। তিনি চাইলে এ বজ্রপাতের মাধ্যমে তাঁর অবাধ্য সীমালঙ্ঘনকারী বান্দাদের শাস্তি প্রদান করতে পারেন, যদিও আল্লাহতায়ালা সব সময় তাঁর বান্দার প্রতি শাস্তিদানের মতো কঠোর আচরণ করেন না।

কেননা আল্লাহতায়ালা বান্দার জন্য রাহমান, রাহিম; গাফুর ও গাফ্ফার। মহান আল্লাহতায়ালা বজ্রপাত প্রসঙ্গে কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘মেঘের গর্জন তার সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং ফেরেশতাগণও তা-ই করে তার ভয়ে। আর তিনি গর্জনকারী বজ্র পাঠান, অতঃপর যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা আঘাত করেন এবং তারা আল্লাহ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে, আর তিনি শক্তিতে প্রবল শাস্তিতে কঠোর। (সূরা রা’দ : আয়াত ১৩)।

হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ বলেছেন, আমার বান্দারা যদি আমার বিধান যথাযথ মেনে চলত, তবে আমি তাদের রাতেরবেলায় বৃষ্টি দিতাম আর সকাল বেলায় সূর্য (আলো) দিতাম এবং কখনো তাদের বজ্রপাতের আওয়াজ শুনাতাম না।’ (মুসনাদে আহমদ।)

কুরআনের আলোকে বজ্রপাতের কারণ

বজ্রপাতের নামে নাজিলকৃত সূরার নাম ‘সূরা-রাদ।’ ১৩ নম্বর পারা, ১৩নং সূরা। বজ্রপাতের কারণ হিসাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, ‘দেশে জুলুম-অত্যাচার অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে বজ্রপাত হয়।’ সূরা নিসা, আয়াত-১৫৩। বজ্রপাত আল্লার গজবের প্রমাণ। সূরা আনকাবুত, আয়াত-৪০।

আল্লার বিধান অমান্য করার কারণেই বজ্রপাত হয়। জুলুম-অত্যাচার ও গুনাহের কাজ যত বাড়বে, বজ্রপাত তত বাড়বে। সূরা যারিয়াত, আয়াত-৪৪। বজ্রপাত আল্লাহ গজবের স্পষ্ট প্রমাণ। সূরা তুর, আয়াত ৪৫। অতএব, বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা আল্লাহপাকের নির্দেশ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

বজ্রপাত থেকে বাঁচার দোয়া

বজ্রপাতসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আত্মরক্ষায় প্রিয়নবি (সা.) তাঁর উম্মতদের বিভিন্ন দোয়া ও তাসবিহ শিখিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন বজ্রের শব্দ শুনতেন তখন বলতেন-‘আল্লাহুমা লা তাকতুলনা বিগজাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা ওয়া আফিয়া ক্ববলা জালিকা।’ (তিরমিজি)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে-হজরত ইবনে আবি জাকারিয়া (রা.) বলেন, বর্ণিত আছে যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে-‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ সে বজ্রপাতের আঘাতপ্রাপ্ত হবে না।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)।

অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে-হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথাবার্তা ছেড়ে দিতেন এবং এ আয়াত পাঠ করতেন-‘সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রাদু বিহামদিহি ওয়াল মালা-ইকাতু মিন খিফাতিহি’।

অর্থ : আমি সেই সত্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যার পবিত্র ঘোষণা করছে মেঘের গর্জন তাঁর প্রশংসার সঙ্গে। আর ফেরেশতাকুল প্রশংসা করে ভয়ের সঙ্গে। (মুয়াত্তা মালেক, মিশকাত)।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.