প্লাস্টিক বোতলের নিচে থাকা এসব চিহ্ন গুলোর অর্থ কি জানেন ?

প্লাস্টিক আমাদের শরীরে এবং পরিবেশ দুইয়ের জন্যেই সমান ক্ষতিকর। কিন্তু প্লাস্টিকের ব্যবহার এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে না চাইলেও রোজকার জীবনে আমরা প্রচুর প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার করে ফেলি। বেশ কিছু জিনিস আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। সেই প্লাস্টিক ব্যবহার করা ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। কিন্তু যেটা আমাদের হাতে রয়েছে, তা হলে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা। মিনারেল ওয়াটার বা ঠান্ডা পানীয় খাওয়ার পর আমরা আর বোতলগুলি ফেলি না। অনেক সময়ই ব্যবহার করা হয় জল রাখতে কিংবা তেল রাখতে। প্লাস্টিকের বোতলে রান্নার তেল রাখা প্রচন্ড ক্ষতিকর। কিন্তু না বুঝেই আমরা সেই ভুলটা করে ফেলি। তবে এই ভুলগুলি শুধরে নেওয়ার একটি সহজ উপায় রয়েছে। প্লাস্টিকের বোতলের নীচের চিহ্নগুলি ভাল করে দেখা।

আমরা অনেকেই প্লাস্টিকের গায়ে একটি ত্রিকোণ চিহ্ন খেয়াল করি না। কিন্তু ভাল করে দেখলে এবং এর মানে জানলে আমরা বুঝতে পারব কোন বোতলে কতটা ক্ষতি হচ্ছে আমাদের।

ত্রিকোণ চিহ্ন থাকা মানে নিশ্চিত হতে পারেন, যে প্লাস্টিকের বোতলটি বিধিসম্মত ভাবে তৈরি হয়েছে। কিন্তু ভিতরের নম্বরের মানে কি? এই নম্বরের মানে জানলে, বুঝে যাবেন কোনও বোতল কত বার ব্যবহার করা উচিত। বিস্তারিত জেনে নিন।

নম্বর যখন ১:

পিইইটি বা পিইটি ১ মানে পলিইথিলিন টেরিপথ্যালিট। এই প্লাস্টিকগুলি একবার ব্যবহার করার যোগ্য। এগুলি বারবার ব্যবহার করা বা গরম করা উচিত নয়। গরম করলে এর থেকে এক ধরনের বিষাক্ত তরল বা অ্যান্টিমনি বার হয় যা শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকরক।

 

নম্বর যখন ২

হাই ডেনসিটি পলিথিলিন বা ২ নম্বর প্লাস্টিক থাকলে বুঝতে হবে সেটা রিসাইকেল করা বা পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক। এগুলি তুলনামূলক ভাবে শক্তপোক্ত। সূর্যের রশ্মিতে বা খুব বেশি (অথবা খুব কম) তাপমাত্রায় এর কোনও চারিত্রিক ক্ষতি হয় না।

নম্বর যখন ৩:

পলিভিনাইল ক্লোরাইড বা ৩ নম্বর প্লাস্টিকের নাম আমরা অনেকেই জানি— পিভিসি। এই ধরনের প্লাস্টিকে অক্সিডেশন হয় না, তাই বহু দিন রেখে দেওয়া যায়। খেলনা, জলের পাইপ, ডিটারজেন্টের বোতল এবং আরও নানা ধরনের জিনিসে পাওয়া যায় এই প্লাস্টিক। তবে এতে খাবার বা পানীয় না রাখাই ভাল। বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নম্বর যখন ৪:

লো ডেনসিটি পলিথিলিন। এই ধরনের প্লাস্টিক সাধারণত অন্যগুলির তুলনায় কম ক্ষতিকর বলে ধরে নেওয়া হয়। এগুলি বারবার ব্যবহার করা গেলেও সব সময় রিসাইকেল করা যায় না। ময়লা ফেলার প্লাস্টিক, জামা কাপড়ের মোড়ক, খাবারদাবারের প্লাস্টিকের মতো জিনিসে এগুলি ব্যবহার করা হয়।

নম্বর যখন ৫:

পলিপ্রোপিলনকে সুরক্ষিত ধরে নেওয়া হয়। সস বা অন্য খাবারের স্যাশে, দই বা চিজের প্যকেজিং, স্যানিটারি প্যাড, বাচ্চাদের ডাইপার, বাচ্চাদের দুধের বোতল, গবেষণার সরঞ্জাম এবং আরও অনেক ধরনের জিনিসে ব্যবহার হয় এই প্লাস্টিক। এগুলি রিসাইকেল করা সম্ভব। এগুলি মাইক্রোওয়েভেও ব্যবহার করা যায়। তবে ডিশওয়াশারে এগুলি পরিষ্কার না করে হাতে ধুয়ে নেওয়াই ভাল।

নম্বর যখন ৬:

পলিস্টিরিন বা ৬ নম্বর প্লাস্টিক। রেস্তোরাঁর টেকআওয়ে খাবারের প্যাকেট, ডিসপোজিব্‌ল থালা বাটি, চামচের মতো বহু জিনিস এই দিয়ে তৈরি। অথচ এই প্লাস্টিক থেকেই ক্যানসার হতে পারে। কোনও খাবার অর্ডার করে এনে সেই বাটি-কৌটো অনেকেই রেখে দেন। কিন্তু গরম খাবার এই প্লাস্টিকের সঙ্গে মিশে আপনার শরীরে নানা রকম সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিষক্রিয়া হয়ে গেলে ঘুমের ব্যাঘাত, ক্লান্তি, বমি ভাবের মতো সমস্যা হতে পারে। বাইরে খেতে গেলে সঙ্গে কাচের কৌটো নিয়ে যান, যাতে বেঁচে যাওয়া খাবার নিয়ে আসতে পারেন। ধাতব স্ট্র ব্যবহার করুন এবং সারাক্ষণ সঙ্গে রাখুন। এই প্লাস্টিকের তৈরি গ্লাসে বা কাপে গরম চা কফি খাওয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই কাগজের কাপ ব্যবহার করুন। অর্ডার করা খাবারের বাটি-কৌটো ফেলে দিন।

নম্বর যখন ৭:

পলিকার্বোনেট প্লাস্টিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন নামে প্রচলিত। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আইপ়ড, সানগ্লাসের, ২০ লিটারের মিনারেল ওয়াটারের পাত্র ও আরও নানা রকম জিনিসে ব্যবহার হয় এই প্লাস্টিক। এই প্লাস্টিক মায়ের গর্ভের ভ্রুণে নানা রকম ক্ষতি করে গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটাতে পারে। হালের গবেষণা বলছে বাচ্চা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরেও এর প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে হৃদ্‌রোগ, ক্যানসার, এবং বন্ধ্যাত্বের মতো বেশ কিছু সমস্যার সঙ্গে যোগ পাওয়া গিয়েছে এই ধরনের প্লাস্টিকের।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.