দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ চশমা তৈরি করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ধরুন, একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষ একাই রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, আশেপাশের দিক নির্দেশনা বা যে লেখার দিকে তিনি তাকাচ্ছেন তার কানে সেই লেখাটি কেউ পড়ে শোনাচ্ছেন। অবাক হচ্ছেন তো! দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য এমনই এক ডিভাইস তৈরি করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। তারা এর নাম দিয়েছেন ‘টকিংগ্লাস’।

এটি মূলত অন্ধ মানুষের জন্য একটি লাইভ শোনার যন্ত্র, যা ব্যক্তির সামনে সমস্ত লেখা পড়তে পারে, যে কোনো বস্তু শনাক্ত করতে পারে।

টকিংগ্লাস তৈরি টিমের নেতৃত্বে ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী সোহেল মাহমুদ, রিপন চন্দ্র দাস এবং ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী বিপুল মণ্ডল। এছাড়াও সুপারভাইজার ও কো-সুপারভাইজার হিসেবে ছিলেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল ও সহকারী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান রাজু।

এমন কোনো ডিভাইস বা প্রযুক্তি, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি বলে দাবি করছেন তারা।

ডিভাইসটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) প্রযুক্তি। ব্যবহারকারীরা এটা গগলস বা চশমা হিসাবে ব্যবহার করবে। চোখের সামনে লেখার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা চশমায় সংযুক্ত থাকবে ক্যামেরা। ডিভাইসটি একটি স্থির চিত্র নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চিত্রের লেখা ব্যবহারকারীকে পড়ে শোনাবে। একজন স্বাভাবিক মানুষ যেভাবে বই পড়তে পারেন ঠিক একইভাবে উপযুক্ত গতিতে শুনতেও পারবেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যবহারকারী। ভয়েস কমেন্টের মাধ্যমে ছবি সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য সেভ করে রাখা যাবে।

এছাড়াও এই চশমা ব্যবহারকারীর সামনে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু থাকলে তাও নামসহ শনাক্ত করতে পারবে।

প্রাথমিকভাবে টকিংগ্লাসটিতে অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন (ওসিআর), ফেইস রিকগনিশন, অবজেক্ট ডিটেকশন, অবজেক্ট রিকগনিশন, কারেন্সি রিকগনিশন, ডিরেকশন ডিটেকশন, লোকেশন আইডেনটিফিকেশন এই ৬টি ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে মানুষের চেহারা চিহ্নিতকরণ এবং পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণসহ বিভিন্ন দিক নির্ণয়, কোনো বস্তু দেখলে তার নামসহ চিহ্নিতকরণ, বাংলা ইংরেজি বই পড়া থেকে শুরু করে কোনটা কত টাকার নোট তাও নির্ণয় করতে পারবে।

সোহেল মাহমুদ বলেন, আমার ইচ্ছা এই ডিভাইসে আরও সুন্দর কিছু ফিচার যুক্ত করে খুব শিগগিরই প্রত্যেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ডিভাইসটি ব্লাইন্ড হেলপার হিসেবে কাজ করবে। যখন একজন অন্ধ ব্যক্তির কাছে কোনো মানুষ থাকবে না, তখনো ওই ব্যক্তি নিজেকে স্বাবলম্বী ভাবতে পারবে। সে নিজ থেকে পথ তৈরি করতে পারবে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যাবে। শুধু যে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ ব্যবহার করবে তা নয়, বরং একজন স্বাভাবিক মানুষও ব্যবহার করতে পারবে। তার একাকিত্বের সময় সে গান শুনতে পারবেন, অন্য ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।

টিম টকিংগ্লাসের সুপারভাইজার কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, ব্লাইন্ড লোকদের জন্য এই চশমাটি তৈরি করতে আমাদের দুই বছর ধরে কাজ করতে হয়েছে। সাধারণ মানুষ জীবনকে যেভাবে উপভোগ করে, এই চশমা ব্যবহার করলে একজন অন্ধ মানুষও একইভাবে জীবনকে উপভোগ করতে পারবেন। নরমাল হিউম্যানের মতোই তারা ফিল করতে পারবেন। এটা মানুষকে আইডেনটিফাই করবে। আমরা এখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করেছি।

উল্লেখ্য, গত ২ বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে সফল হন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টিম। বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের এটুআই (A2I) এর ডিজঅ্যাবিলিটি চ্যালেঞ্জ ফান্ডে ২০১৮ সালে এই প্রকল্পটি গৃহীত হয়।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.