‘দুই বাহিনীর সম্পর্কে চিড় ধরার অবকাশ নেই, দোষীদের বিচারের মুখোমুখি হবে’

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মৃত্যুর ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের সম্পর্কে চিড় ধরার কোন অবকাশ নেই বলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন দুই বাহিনী প্রধান। বুধবার কক্সবাজারে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ অভিন্ন ভাষায় বলেন, সিনহার মৃত্যুর ঘটনায় যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এই কমিটির সুপারিশের আলোকে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দোষীদের অবশ্যই প্রায়শ্চিত্য করতে হবে। দুপুরে হেলিকপ্টারে করে দুই বাহিনী প্রধান কক্সবাজারে যান। এরপর সেনাবাহিনী ও পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর তারা সংবাদ সম্মেলনে আসেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, গত ৩১শে আগস্ট রাতে কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই কারণেই আমরা এখানে এসেছি।

এসেই এই এলাকার সেনা বাহিনীর এবং পুলিশ বাহিনীর সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং পুলিশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে আসছে। ‘৭১ এ পুলিশ এবং সেনাবাহিনী যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। বিগত প্রায় ৫০ বছরে দেশের যে উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়েছে, দেশের জন্য নিরাপত্তার যেসব ঝুঁকি এসেছে তা মোকাবিলায় অন্যান্য সংস্থার ন্যায় সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধেও এই দুই বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মেজর সিনহার মৃত্যুর ঘটনায় আমরা মর্মাহত। পুলিশ বাহিনীর সবাই মর্মাহত।

ঘটনাটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। এই টিমের প্রতি আমাদের আস্থা আছে।

তিনি বলেন, ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দায় প্রতিষ্ঠানের হতে পারে না। তদন্ত কমিটি যাদের দোষী সাব্যস্ত করবে তাদের প্রায়শ্চিত্য করতে হবে। এখানে কোন প্রতিষ্ঠান কারো সহযোগিতা করবে না। কারও বিপক্ষে যাবে না।

আমরা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলতে চাই বহু বছর ধরে দুই বাহিনীতে যে আস্থা, বিশ্বাস এবং সম্প্রীতি গড়ে উঠেছে তা অটুট থাকবে। সম্প্রীতিতে কোন ধরণের চিড় ধরে এমন কিছু হবে না। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও হবে না। পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকেও হবে না। যেহেতু ঘটনাটি তদন্তাধীন আছে তাই এটি নিয়ে বেশি কিছু বলবো না।

সেনা প্রধান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মেজর সিনহার মায়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। কথা দিয়েছেন, সুষ্ঠু তদন্ত হবে। যারা দোষী তাদের বিচার হবে।

তিনি বলেন, এই ধরণের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি।

সিনহার মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে না এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা আশা করি ঘটনার প্রভাবমুক্ত তদন্ত হবে। কমিটির পরামর্শ অনুযায়ি পরবর্তী আইনী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি কোন উস্কানি দিয়ে কেউ কোনভাবে সফল হতে পারবে না। যারা উস্কানিমূলক কথা বলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে তারা সফল হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং যাবে। দেশের কল্যাণের স্বার্থে দয়া করে কেউ কোন ধরণের উস্কানিমুলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবেন না।

সিনহার মৃত্যুর ঘটনায় কক্সবাজারে মাদক বিরোধী অভিযানে কোন প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নে সেনাবাহিনী প্রধান ও পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল অভিন্ন কণ্ঠে বলেন, এ ঘটনায় মাদক বিরোধী অভিযানে কোন প্রভাব পড়বে না।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.